- বইয়ের নাম :- আরশিমিডিস
- লিখেছেন :- Shohm Guha
- লেখক :- সোহম গুহ
- প্রকাশক :- কল্পবিশ্ব
- মূল্য :- ৩২৫/-
বই প্রসঙ্গ :- কল্পবিশ্ব চিরকালই অন্য ধরনের কাজ করে । এই বইটাও সেই Out of The box কাজের একটি সার্থক দৃষ্টান্ত। পেপারব্যাক এ মোড়া এই স্বপ্নের উড়ানের মধ্যে রয়েছে 15 টি গল্প , যা পনেরোটি মাত্রার । আমাদের মনের মধ্যে হয়তো অসংখ্য অনুভূতি রয়েছে এই পনেরোটা গল্প সেই প্রত্যেক অনুভূতিকে একবার স্থানচ্যুত করে দিয়ে চলে যায়। বইটির বিষয়বস্তু সাইন্স ফিকশন, ফ্যান্টাসি এবং গল্পগুলো যে প্লটের উপর নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলো সত্যি অনবদ্য এবং বাস্তবতার এক মিশ্রন । লেখককে আমি চিনতাম না । হ্যাঁ এই প্রথম একটা বই লেখককে না চিনে পড়েছি । অবাক হয়েছি ওই অদ্ভুত সুন্দর লেখনী সত্ত্বা , যার ধরন আলাদা হ্যাঁ বাংলা বর্ণমালার প্রত্যেকটা শব্দ হয়তো আছে কিন্তু যেভাবে পাঠককে দেখিয়েছে সে শব্দ সাজিয়েছে ব্যবহার করেছে তার মস্তিষ্কপ্রসূত ভাষা তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য ।
গল্প প্রসঙ্গ:-
১. শৈত্যের গান:
বরফে ঢাকা পরিবেশের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে বাঁচতে শিখেছিল সংগ্ৰাম ও রীতা । খাদ্য নেই জল নেই জীবনধারণ করার জন্য আনুসঙ্গিক অভ্যাস গুলোও নেই ।প্রতিবেশী অঞ্চলের সঙ্গে তাদের বনিবনা নেই তাদের আবার খাদ্য রয়েছে সবজি রয়েছে সংগ্রামের সেইসব খুব দরকার । কিন্তু সেখানকার নেতার ডানহাত সাজিদের শরীরের একটা অংশ নেই কেউ যেন খুবলে নিয়েছে ! সত্যি শীত খুব কঠিন শব্দ । কত না খেতে পাওয়া মানুষের হাহাকার থাকে , ঠান্ডা সহ্য করতে পারেনা এরকম মানুষের কষ্টের গল্প থাকে !! সবার হয়তো মানসিক জোর থাকে না এগিয়ে আসার ! কি হয়েছে প্রতিবেশী অঞ্চলের সংগ্রাম কি জানতে পারবে ? জানতে হলে গল্পটা পড়ে ফেলতে হবে 🤍
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটা একটা জমাট বাঁধা কুয়াশার মত যত ধরতে যাও তত ধরা দেবে না বুঝতে চাইলে বুঝতে দেবে না কিন্তু বড্ড মন খারাপ দেয় বাস্তবতা শেখায় । আমার সবচাইতে প্রিয় এই গল্পটা 😄✨ মূঢ় হয়ে গেছিলাম পড়ে এটা।
২. হস্তীসঙ্গীত:-
এ ঘটনা বা এই গল্প আমরা এই যুগে হামেশা দেখতে পাই । কিন্তু এই গল্প অনেক অনেক পরের একটা জঙ্গলের একটা হস্তী শাবক এবং তার মালিকের । জঙ্গল কাটা হচ্ছে নিয়ে তারা খুব অসন্তুষ্ট । মালিক এবং তার যষ্টি অর্থাৎ হস্তী সাধক দুজনের মাথায় একটা করে রয়েছে Neural Implant .. । সেই হেড মাহুত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খুন হবে তার দোষ সে জঙ্গল কাটতে বাধা দিচ্ছিল । কিন্তু তার মারা যাবার পর একটা হস্তিশাবক কিভাবে একটা মানুষের মতো প্রতিশোধ নিচ্ছে সেটারই গল্প ! রাজনৈতিক কর্মকর্তারা কি বুঝতে পারবে ? মালতীর এই অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের পেছনের রহস্য ? জানতে হলে গল্পটা পড়ে ফেলতে হবে ।
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটার শেষ লাইনটা যখন পড়ি তখন অবাক হয়েছিলাম । চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল মালতি এবং হেড মাহুত লালু । হয়তো চোখের কোনে জল ও এসেছিল । এটাও আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় গল্প 😄🤍 সত্যি ভালোবাসার থেকে বড় কিছু হয় না 🌼
৩. ঢেউ:
অনেক পরে এক স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে গল্পের একটি চরিত্রের । মহাকাশে সূর্যের সামনে ভাসছে সে । সে হয়তো জানে সে গল্পের জগৎটার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রের শিকার ! কিন্তু তাও সে ভালবেসেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর একমাত্র ছেলে অরুণকে …
সমস্ত বাধাবিঘ্ন পেরিয়েছে এই ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পেরেছে । কিন্তু আদৈও কি জীবনের শেষ ধাপ অব্দি চরিত্রর টা পৌঁছতে পেরেছে ? ভালোবাসা হয়তো অন্ধ জানতো না চরিত্রটা বুঝতে পারেনি! কোন তিক্ত সত্যি অপেক্ষা করছে তার জন্য ! কিন্তু সে জানে সে তার সবটা দিয়ে ভালবেসেছে ….
প্রতিক্রিয়া:- এটা একটা অন্যরকম ভালোবাসার গল্প । বৃহৎ কাদা ভরা সমাজের মধ্যে একটা পদ্ম ফোটার গল্প । এই গল্প দৃষ্টিকোন বদলাবে । ভালোবাসা কোন খাঁচার মধ্যে আটকে থাকে না সে চামড়ার হোক কি লোহার এই গল্প শেখাবে।
৪. যতিচিহ্ন:-
একটা ছোট্ট চিহ্ন একটা যুগ পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখতে পারে ? যা সমগ্র মানবজাতির চোখের আড়ালে পড়েছিল সেটাই একটা বড় প্রাকৃতিক বিপাক ডেকে আনবে না তো ? খুঁজে কি পাবে সমীরন চক্রবর্তী কোন অন্ধকার এইসব রহস্যের মূলে রয়েছে ? তার একমাত্র ছেলে বিভাস তার অন্তিম চিঠিতে কি জানিয়েছিল তার বাবাকে ? জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে এই গল্পটা ..
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটা আমার মাথার সমস্ত গ্রে ম্যাটার শুষে নিয়েছিল । এবং অবশ্যই কিছু কিছু বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া আছে যেগুলো আমি অন্তত অজ্ঞ । কিছু টিকা দিয়ে দিলে এই গল্পটার শেষে তাহলে আরো খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে সুবিধা হতো । আমাকে গুগল সার্চ করে দেখতে হতো না BIOLOGY র প্যাঁচালো বিবর্তন। এই গল্পটি হচ্ছে ভয়ের গল্প শেষে গিয়ে আমি চমকে উঠেছিলাম ।
৫. আরশিমিডিস:-
আচ্ছা কেমন হয় এমন একটা স্বপ্ন দেখলেন সেখানে এই জগতের ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডের অনেক চরিত্র কোনোভাবে Connected.. সুচন্দ্রার জন্য আর্য একটা সাইট থেকে অর্ডার দেয় একটা আয়না । আয়নাটার মধ্যে কিছু একটা রয়েছে বুঝতে পারে আর্য এবং তার অ্যাসিস্ট্যান্ট জীবকের ওপর দায়িত্ব দেয় এই আয়নার ইতিহাস খুঁজে বার করতে ? কি এমন ছিল আয়নার ইতিহাসে ? এবং সুচন্দ্রার মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিল আর্য কি সেই পরিবর্তন? আয়না টার নাম আরশিমিডিস কেন ? অনেক অনেক প্রশ্ন উত্তর পাবেন শুধুমাত্র গল্পটা পড়ে ! এবং হয়তো আরও অনেক অনেক দরজা খুলে যাবে আপনার চোখের সামনে ।
প্রতিক্রিয়া:- এই বইটার নামকরণ যে সার্থক এই গল্পটা পড়ার পর আমি বুঝতে পেরেছিলাম । প্রত্যেকটা গল্প যেমন একটা অন্য জগতের কথা বলে এই একটা গল্প কত জগতের কথা বলেছে কত মানুষের কথা বলেছে । গল্পটা দুটো দিক আছে। একটা সূক্ষ্ম দিক আছে যেটা আমি পরে বুঝতে পারি এবং কানেক্ট করার পর অতি অদ্ভুত অদ্ভুত অনুভূতি হয় 🙇🤍✨।।
৬. পুনর্ভব :-
অজয় এবং রাই বিবাহিত দম্পতি । একটা উল্কা পড়েছিল এবং সেটা দেখতে যায় Andrew বলে একজন লোক সে গিয়ে দেখে একটা পাথরের মত জিনিস কিন্তু হাপরের মত ওঠা নামা করছে । যা পৃথিবীর বুকে পড়েছিল 640 মিলিয়ন বছর আগে । কি আছে পাতলা স্তরের নুড়ির মতো দেখতে অদ্ভুত বস্তুটার মধ্যে ? জিনিসটা যখন পরীক্ষা করতে যায় অজয়ের সঙ্গে সংস্পর্শ ঘটার পর অজয়ের মধ্যে কি পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিল রাই? যা তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগত জীবনকে এক নিমেষে বদলে দিয়েছিল ! কোন বীজের ধারক হয়ে উঠছে রাই? কোন বিবর্তন আসতে চলেছে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ? কিন্তু সেটা অজয়ের অজানা নয় !! জানতে হলে পড়তে হবে এই গল্পটা …হয়তো মানব জীবনের এক ভয়ঙ্কর বিবর্তনের সম্মুখীন হতে হবে রাই কি তার দিকে ধেয়ে আসা সমস্ত বিপদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে ? এবং ধ্বংস করতে পারবে সেই আদিম বীজকে ?
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটার রিপ্রেজেন্টেশন টা খুব দারুণ লেগেছে আমার । এক একটা ঘটনাকে লেখক এত সুন্দর দেখিয়েছেন । অনেকটা যেন সেই ঘড়ি অ্যান্টি ক্লক ওয়াইস ঘুরে আবার ক্লকওয়াইজ ঘুরে প্রথম কাঁটায় আটকে যায়। আতঙ্ক ভর করেছিল এই গল্পটা পড়ার পর ।
৭. মৃত্যুমুঠোভাষ :-
একটা দোকানে ফোন কিনতে যায় তানিয়া । নতুন ফোনের নাম্বারে ফোন আসার পর রিং ব্যাক করার পর বলে "The Number You are trying to reach Does not exist" তারপরই দেখতে পায় সে যে বিরক্ত মুখে তার ঘরে দাঁড়িয়ে ফোন করছে তার একটি ছবি ! কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব ? ইন্টারনাল স্টোরেজে অনেকগুলো ছবি দেখতে পায় অনামিকা, তানিয়ার বন্ধু যেখানে সে এবং তার বন্ধু তানিয়ার পরিবার তাদের নিজেদের ছবিতে ভর্তি । কি রহস্য লুকিয়ে আছে ফোনের ওপারে ? কোন এক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নয় তো ? প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং তার স্বামীর খুনের সঙ্গে এই ফোনের কি যোগাযোগ ? কোন প্রাচীনকালের এক রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে তানিয়া এবং অনামিকার সামনে ? জানতে হলে পড়তে হবে গল্পটা ।
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটিও বেশ ইন্টারেস্টিং । সুন্দরভাবে দুটো ঘটনার মধ্যে যোগাযোগ রেখেছেন লেখক । এই গল্পটায় বৌদ্ধ তন্ত্রযানের এত সুন্দর ব্যবহার করেছেন সত্যি সুন্দর 🤍।
৮. একটি মেয়ের গল্প :-
এক যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রাম সেই গ্রামেরই একরোখা মেয়ে অমিশা বুঝে গেছিল সে আর পাঁচটা মেয়ের মত নয় । কলকাতায় জাপানিরা বোম ফেলছে । কিন্তু তার ভয় সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। একদিন জল আনতে গিয়ে এক অদ্ভুত মানুষের সঙ্গে আলাপ হয় তার গলায় কেউ কামড় বসিয়েছে এবং সেখান থেকে রক্ত যেন বাঁধ মানতে চাইছে না। সেই লোকটি সেবা-শুশ্রূষা করতে শুরু করলো তার মা এবং সে । লোকটি বা কে? রাতের দিকে জঙ্গলের দিকে আলো খেলতে শুরু করলো, তারা কে? তারা কি রক্তমাংসের মানুষ? অমিশার থেকে কোন সত্যি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তার ছোটোবেলা নিয়ে? অমিশা সবার থেকে আলাদা কেন ? কোন ভয়ঙ্কর সর্বনাশ কে রুখতে অমিশার জন্ম হয়েছিল ?জানতে হলে গল্পটা পড়তে হবে ।
প্রতিক্রিয়া:- এটা একটা বেশ অন্যরকম গল্প ।সুন্দরভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক । অন্যরকম ভালোবাসা দেখিয়েছেন লড়াই দেখিয়েছেন । কিন্তু কোথাও কোথাও মানুষকে থামতে হয় বা মানুষের ঊর্ধ্বতন কিছুকে । কিন্তু সবই যে নিয়তির লেখা । সবকিছু থামবে একদিন সেটাও দেখানো হয়েছে সুন্দরভাবে গল্পে ।
৯. উর্মিলা :
এক বৃদ্ধ বাবার কাছে একটা রোবট পাঠায় তার একমাত্র ছেলে । ৭২ বছর বৃদ্ধের আর নিজের খেয়াল রাখতে ইচ্ছা হয় না তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সেটাও যেন চলে গেছে । মাঝে মাঝে সে অবাক হয় সে এককালে ডাক্তার ছিল । রোবটটা সবকিছু পারে, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ । কিন্তু কোন এক জাদু বলে খিটখিটে ভদ্রলোক উর্মিলাকে মানিয়ে নেয় । উর্মিলা কিভাবে খিটখিটে ভদ্রলোকের মধ্যে নতুনভাবে নিজেকে ভালোবাসার মন্ত্র পুরে দিয়েছিল ?তা জানতে গেলে গল্পটা পড়তে হবে …আবার সেই লোকটা নিজের পুরনো আমি কে ফেরত পেয়েছিল কীভাবে সেটাও জানতে গেলে গল্পটা পড়তে হবে !!
প্রতিক্রিয়া:- আমাদের জীবন এক একটা সময় শ্লথ হয়ে যায় তখন দরকার উর্মিলার মত কিছু চরিত্র যারা ধাক্কা দেবে সে হোক না রোবট কিংবা মানুষ । ভালোবাসতে শেখাবে । কোন কিছুর জন্য যে জীবন থেমে থাকে না সেটা শেখাবে ।। বড় মন ভালো করা গল্প এটা। খুব ভালো লেগেছিল 🤍🌼।
১০. নশ্বর:-
দাঙ্গার সময় কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে আছে রক্ত ভীত আতঙ্কিত মানুষজন । এই সংকটকালীন সময়ে উর্মি আর সপ্তকের একমাত্র কন্যাসন্তান জন্ম নেয় । ছোট্ট শিশুটার কপালের ফের দেখে অবাক হয়ে যায় তারা। সমস্ত হাসপাতালের ঘরের পর ঘর ভরে যাচ্ছে মুমূর্ষ রোগীদের দুর্দশার সাক্ষী হয়ে। একটা নিউট্রন স্টার এগিয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে কয়েক মুহূর্ত পর হয়তো ধ্বংসলীলা শুরু হয়ে যাবে । উর্মির ভাই উর্মির এই বিবাহকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি । এই ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে পারবে উর্মি এবং তার পরিবার ? ছোট্ট কন্যা সন্তানটারই বা কি হবে ! জানতে পারবে এই পৃথিবীর ইতিহাস কলকাতার ইতিহাস বাঙালি দের ইতিহাস ? উর্মিল ভাই সংগ্রাম কি বাঁচাতে পারবে সবাইকে ? নাকি সে কিছুটা পাপস্ফলন করবে কোন কাজের মাধ্যমে কি সেই কাজ ? জানতে হলে গল্পটা পড়ে ফেলতে হবে ….
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটাও আমাদের চোখের সামনে হিংসা ঘৃণার পর্দা সরিয়ে ভালোবাসা দেখাতে সক্ষম । কখনো কখনো ত্যাগ হয়তো ভালোবাসার থেকে তীব্র হয় । এই গল্প আমাদের শেখায় কিভাবে মানুষকে আগলে রাখতে হয় । মন খারাপ আর মন ভালোর মিশেলের একটা গল্প এটা 🤍।
১১. ক্ষীনতনু :
এক বৃদ্ধ মানুষ জয়ন্ত তার স্ত্রী এবং তার নাতনীকে নিয়ে উঠে এসেছেন পাহাড়ের কোলে একটা ছোট্ট জনপদে । সেখানে নাতনির সঙ্গে আলাপ হয় একজন লোকের সঙ্গে । ভেজা মাটির উপর পায়ের ছাপ দেখে চমকে যায় জয়ন্ত একজন সাধারণ মানুষের পা এত লম্বা হতে পারে । রহস্য লুকিয়ে আছে গ্রামটার পেছনে থাকা জঙ্গলে ? জয়ন্তর ছেলে তাদের পরিবারের উপর আসা আসন্ন বিপদের কথা কি বুঝতে পারবে? নাতনি জিনিয়ার সঙ্গে ওই লোকটার এমনকি বন্ধুত্ব ? জানতে হলে গল্পটি পড়ে ফেলতে হবে ….
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটা একটু চমকপ্রদ । ভয় ধরিয়েছে বেশ । লম্বা লম্বা পায়ের ছোপ আতঙ্ক ধরিয়েছে মনে।
১২. অষ্টপদী :-
অমিও এবং সৃজিত এসেছে ইটাগর থেকে কিছুটা দূরবর্তী স্থানে একটা অদ্ভুত পাথরের টুকরো পাওয়া গেছে। সেই নিয়ে গবেষণা করতে এসেছে ওরা দুজন । গুহাটা আবিষ্কার করার পর তারা বুঝতে পারে গুহাটায় একটা কোন প্রাণীর বসবাস আছে কি সেই প্রানী ? এই রেডিয়েশন যুক্ত গুহার মধ্যে সে বেঁচে আছেই বা কি করে ? টালমি গ্রামে কোন ভয়ংকর সত্বার উপদ্রব শুরু হয়? সৃজিত কি খুঁজে পাবে এই প্রাণীর ইতিহাস ? জানতে হলে গল্পটা পড়ে ফেলতে হবে ?
প্রতিক্রিয়া:- অসাধারণ একটি গল্প এটা । পড়তে পড়তে অনেক সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলাম আমি । ভাবতে বাধ্য করেছিল রহস্যের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটাকে নিয়ে । আবার বন্ধুত্বের বেদনাও আমাকে সংস্পর্শ করেছিল । দুঃখও ছিল গল্পটায় । সুন্দর একটা পারফেক্ট মিশ্রণ ছিল ✨।
১৩. লিমেরেন্স :-
রাই আকাশকে খুব ভালোবাসে । কিন্তু আকাশ কখনো কে ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি বা বুঝতে চাইনি .. সৈকত এই নিয়ে রাইকে বলে সে সাহায্য করবে তাকে কিন্তু তার বদলে তাকে কিছু দিতে হবে !! কি সেই শর্ত যা রাইএর চোখে সৈকতকে নামিয়ে দিয়েছিল অনেক নীচুতে ? সৈকতের সাহায্যে কি রাই আর আকাশ একে অপরকে পেয়েছিল ? সৈকতের ভূমিকাটাই বা কি ? কোন গভীর অনুভূতি লুকিয়ে আছে সৈকতের মনে যেটা আটকানোর জন্য সৈকত এই পন্থা অবলম্বন করেছিল ? কি সেই পন্থা ? জানতে হলে গল্পটা পড়তে হবে ✨
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্পটা একদিক থেকে যেমন পরিপূরকের গল্প তেমনি ভগ্নাংশের ও গল্প । সত্যিই অসাধারণ গল্পটা পড়ে আমি কিছুক্ষণ চরিত্র গুলোর সঙ্গে নিজেকে একাত্বের চেষ্টায় ছিলাম । কিন্তু পারিনি না অত কঠিন হয়তো আমি হতে পারব না সৈকতের মত । না হতে পারব আকাশের মত । খুব খুব সুন্দর এবং মন খারাপ করার গল্প এটা 🤍
(লেখক এখানে যে সৈকতের একটা যুক্তি দেখিয়েছিলেন সেখানে একটু অসংগতি লাগে আমার শুধুমাত্র সেই অংশটা একটু দুর্বল গল্পটায় বাকিটুকু মর্মস্পর্শী এটা লেখকের অনেক আগের গল্প💙।
১৪. অগ্নিচোর :-
এক প্রবল ঝঞ্ঝাকাতর শৈত্যের রাতে একটা গুহার মধ্যে আশ্রয় নেয় লামেচ্ । চারিদিক ধ্বংস হয়ে গেছে তার প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষ । অলিম্পস নামক এক জায়গায় দেবতাদের বাস । যারা চায় না তাদের একমাত্র সম্পদ নীল আগুনকে হাতে তুলে দিতে । কিন্তু প্রমিথ এর মনে হয় এটা তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে । ধ্বংস থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য তাদের আগুন দরকার । কি হবে এরপর ? কি ঘটবে অলিম্পস এবং লামেচের গুহায় ? লামেচ্ রা কি সেই নীল আগুন খুঁজে পাবে ? যা তাদের রক্ষা করবে ।। প্রমিথ এর ই কি হবে ? জানতে হলে গল্পটা পড়ে ফেলতে হবে …🌻
প্রতিক্রিয়া:- এই গল্প বাঁচার । নিজেদেরকে রক্ষা করার । বাঁচার থেকে বড় কিছু হতে পারে না । এই গল্পটাও সুন্দর । শিখিয়েছে অনেক কিছু অনুভব করিয়েছে এই গল্পটা ।
১৫. ৪.৮ :-
নিজের একমাত্র বাবা মারা যাওয়ার পর সমাজে খুব একা হয়ে পড়ে দীপ । অনেক ঋণের বোঝা তার মাথায় । ঘরে আছে তার একমাত্র একটা ফুটফুটে বোন । চিন্তার পাহাড় ভেঙে পড়ে তার মাথায় । এই সময় একটা সুযোগ আসে দীপের কাছে যা তার জীবনকে আমূল পরিবর্তন করতে সক্ষম । কি সেই সুযোগ ? কোন যুগ পরিবর্তনকারী পরীক্ষার গিনিপিগ হতে চলেছে দীপ? একটা ছোট্ট ভুল দীপকে কোন রূঢ় বাস্তব জগতে নিয়ে ফেলবে ? যেখানে বেঁচে থাকা মানে বিলাসিতা । জানতে হলে গল্পটা পড়ে ফেলতে হবে ….
প্রতিক্রিয়া:- বড় তেতো বাস্তব এটা । গল্পের শেষ দিকটা কষ্টের । এরকম জীবনের শেষ যেন কারোর না হয় এটাই যেন চরিত্রটা বারবার বলতে চেয়েছে আমায় । বড্ড কঠিন । 😄 । এই গল্পটাও অসাধারণ ।
কিছু কথা:-
Sci fi গল্প এরম হয় ? অবশ্য আমি চিরকালই জানতাম Sci Fi মানেই Alien , Outer Space, Adventure , Spaceship , Robot নয়। Sci fi শেখায় সমাজ কি রকম হতে পারে ভবিষ্যতে , এটাই হয়তো লেখকের পরীক্ষা সে কতটা তার কল্পনার মাধ্যমে সেইটা ফুটিয়ে তুলতে পারবে এখানে সোহমদা উতড়ে গেছে। প্রত্যেকটা গল্প যেন সমাজের কিন্তু মোড়কটা Sci-fi এর ।বইটা অনেকটা স্বপ্নের মত একটা ছোট্ট বুকমার্কের মত টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটা ট্রেনে বসিয়ে দিল । সেই ট্রেনটা কত জায়গা দিয়ে গেল কখনো জানলা দিয়ে হাত বাড়ালে বরফ ছুঁতে পারছি কখনো আগ্নেয়গিরির লাভা র সংস্পর্শ থেকে নিজেকে বাঁচাচ্ছি। অসংখ্য চরিত্র গল্পের সীমাবদ্ধতায় নিজেদেরকে নিয়ে মত্ত ,আমি দেখতে পাচ্ছি ছুঁতে পারছি ,অনুভব করতে পারছি তাদেরকে কিন্তু পরের প্যারায় আসন্ন বিপদের হাত থেকে তাদেরকে বাঁচাতে পারছি না । কষ্ট হয়েছে দেখে চরিত্র গুলো আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করেছে সাহায্য চেয়েছে কিন্তু আমার হাত-পা বাঁধা কিছুই করার ছিল না । এক একটা চরিত্র চুপ করিয়েছে দেখিয়েছে কিভাবে বাঁচতে হয় , এবং ছাড়তে হয় । এক একটা গল্পের শব্দ গুলো যেন ঘুমপাড়ানি গান ।ট্রেনেই ঘুমিয়ে পড়তাম , কোন এক গল্পের সকালবেলা দিতে আসা সংবাদ মাধ্যম জাগিয়ে দিত । ট্রেনটা যখন খুব অন্ধকার গুহার পাশ দিয়ে যেত ভয় পেতাম কারণ "অজানারে ভয়" ।
সত্যি অসাধারণ এক অনুভূতি গ্রাস করেছিল প্রত্যেকটা গল্প পড়ার পর । নতুন লেখকের বই পড়তে একটা ভয় হয় কিন্তু সেই ভয় এই বইটা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে আর একটা নরম ভোর মাখানো আলোর ওম দিয়ে মুড়ে রেখেছিল আমায় । অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই গৌতম মন্ডল (রনিনদা) কে যে আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল । আর আমি এখন সোহম দার লেখনী, গল্পের ভক্ত । অনবদ্য ছিল এই মায়াময় যাত্রা । তবে হ্যাঁ এই বই মাঝে মাঝে পড়াই যায় যখন খুব শান্ত লাগবে নিজেকে, তখন পড়বো । আপনারাও যদি অন্য জগতে যেতে চান এক মায়াময় জগত যেখানে নরম গোধূলি আলো আপনাকে পথ দেখাবে । এই বইটা আসলে একটা পোর্টাল অন্য জগতের।
তবে হ্যাঁ, এই বইটার পেছনে একটা টীকা অংশ থাকলে খুব ভালো হতো ।
একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি এই বই আপনার Sci fi নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির অনেকটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে । ধন্যবাদ জানাই কল্পবিশ্বকে তাদের এই সাহস আমাকে অনুপ্রাণিত করে বরাবর।।
অলমিতি …ভালো থাকবেন পাঠে থাকবেন নতুন নতুন বই পড়ুন এবং পড়ান তাতে নতুন লেখকরা সাহস পাবে নিজেকে ভেঙে গড়ার…🌼
Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi