কারবালাই কি আশুরা? ওমর আলী আশরাফ

আমরা যে সমাজে বেড়ে উঠেছি, আশুরা মানেই মনে করি রক্তাক্ত কারবালা। আশুরা আর কারবালার ইতিহাস আমাদের সমাজে সমার্থক হয়ে গেছে। আমি অনেক মানুষ দেখেছি, তারা আশুরার রোযা রাখে ঠিক; কিন্তু এর কারণ জানে না। অবচেতনে তারা কারবালার স্মরণে রোযা রাখেন। এ জায়গাটায় এসে বোধ করি আশুরা, কারবালা এবং শিয়াগ্রস্ততা নিয়ে কিঞ্চিৎ আলাপ করা জরুরি।



বৈশ্বিক মুসলিম সংস্কৃতিতে শিয়ারা উল্লেখযোগ্যহারে নিজেদের তুলে ধরছে এবং তাদের বিশেষ উৎসব কিংবা শোক-যাপনের দিন হিসেবে আশুরা মহাসমারোহে উদযাপিত হয়ে আসছে। সম্ভবত দুই ঈদের চাইতেও এই দিন তাদের কাছে অধিক গুরুত্ববহ। এই দিন তারা তাজিয়া মিছিল করে, মর্সিয়া গায়—আরও অনেক কিছু করে। অথচ ১০ই মুহররম দিনটিতে শুধু কারবালাই সংঘটিত হয়নি, আমাদের নবীজির ওপর ওহি আসার বহু আগ থেকেই এই দিনটি সমাদরে পালিত হয়ে আসছে।

কী সেই কারণ, যার কারণে আশুরা মুসলিম সংস্কৃতির অনবদ্য অংশ এবং দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে?
সুরা শুআরায় আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ اَنۡجَیۡنَا مُوۡسٰی وَ مَنۡ مَّعَہٗۤ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿ۚ۶۵﴾ ثُمَّ اَغۡرَقۡنَا الۡاٰخَرِیۡنَ ﴿ؕ۶۶﴾
‘এবং আমি মুসা ও তার সঙ্গীদের সবাইকে উদ্ধার করলাম। তারপর অপর দলটিকে করলাম নিমজ্জিত।’

এইযে আল্লাহ বলছেন তিনি মুসা আলাইহিস সালাম এবং তার সঙ্গীদের উদ্ধার করেছেন, ফিরআউন সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছেন, আল্লাহয় বিশ্বাসের ইতিহাসে এটি একটি মহাঘটনা। এবং মুসা-ফিরআউনের এই ঘটনাটি ঘটেছিল দশে মুহররম; অর্থাৎ আশুরার দিনে। বুখারি-মুসলিমসহ সহিহ হাদিসের কিতাবদিতে এই ব্যাপারে বিস্তর আলাপ এসেছে।

সহিহ মুসলিমে আছে—
)١١٣٤ (وَحَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، حَدَّثَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ أُمَيَّةَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا غَطَفَانَ بْنَ طَرِيفٍ الْمُرِّيَّ ، يَقُولُ : سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ : حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ، وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :’ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ—إِنْ شَاءَ اللَّهُ—صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ‘. قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
صحيح مسلم | كِتَابٌ : الصِّيَامُ. | بَابٌ : أَيُّ يَوْمٍ يُصَامُ فِي عَاشُورَاءَ؟

‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন নিজে সিয়াম পালন করেন এবং লোকদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, ইয়াহুদি ও নাসারারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইনশাআল্লাহ, আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, পরের বছর আসার আগেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাত হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, ১১৩৪)

আশুরার রোযা সম্বন্ধীয় এই হাদিসটিতে দেখা যাচ্ছে, ইসলামের বহু আগে থেকে ইয়াহুদি-নাসারারা এই দিনটি উদযাপন করত। কেন তারা আশুরা পালন করে রোযা রাখত?

)١١٣٠ (وَحَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :’ مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ ؟‘. فَقَالُوا : هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ؛ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ؛ فَصَامَهُ مُوسَى؛ شُكْرًا ؛ فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :’ فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ‘. فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
صحيح مسلم | كِتَابٌ : الصِّيَامُ. | بَابٌ : صَوْمُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ.

‘ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে ইয়াহুদিদেরকে আশুরার দিন সিয়াম পালনরত দেখতে পেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিগ্যেস করলেন, তোমরা এটা কোন দিনের সিয়াম পালন করছো? তারা বলল, এ মহান দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফিরআউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। মুসা আলাইহিস সালাম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সিয়াম পালন করেছেন। তাই আমরাও এই দিনে সিয়াম পালন করছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা তো তোমাদের থেকে মুসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী এবং হকদার। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিয়াম পালন করলেন এবং সিয়াম পালন করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিলেন।’ (সহিহ মুসলিম, ১১৩০)

এখানেই শিয়া-সুন্নির বড় তফাত। শিয়ারা আশুরা পালন করে কারবালার কারণে এবং এদিন তারা তাজিয়া মিছিল করে, মর্সিয়া গায়, গান বাজায়, ইত্যাদি। আর আহলুস সুন্নাহ দিনটি পালন করে আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালামকে ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফিরআউনকে তার বাহিনীসহ নিমজ্জিত করেছেন, এই শুকরিয়া হিসেবে। শুধু তাই নয়, এই সিয়াম পালনে দিন-তারিখ যেন কিতাবিদের সঙ্গে হুবহু মিলে না যায়, সে জন্য মুহররমের নবম তারিখেও রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে। (৯-১০ অথবা ১০-১১ দুইদিন একত্রে রোযা রেখে কিতাবিদের থেকে ভিন্নতা করা হয়।)

এবার ভাবুন, এদিনটি কি আমরা মুসা আলাইহিস সালাম আর ফিরআউনের ঘটনার কারণে পালন করি রোযা রাখি? আমি অনেক মানুষকে দেখেছি, তারা এই দিনটিতে আশুরার রোযা রাখে ঠিক; এবং তারা মানে করে আশুরা মানেই কারবালা। অথচ এই দিনে তারা রোযা রাখছে মুসা আলাইহিস সালামের সুন্নাহ অনুসরণে, সেই ইতিহাস যেমন তারা জানে না, রোযার নিয়তও তাদের শুদ্ধ থাকছে না।

কারবালার ঘটনায় আমরা দুঃখিত, হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত আমাদের কাঁদায়; কিন্তু এজন্য যেন আশুরা পালনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। না হয় আশুরার রোযা রাখবার নিয়তই শুদ্ধ থাকবে না এবং আশুরা যে মূলত আনন্দের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, রোযার মাধ্যমে মুসা আলাইহিস সালামের সেই শুকরিয়ায় আমরা শামিল হই, এই তত্ত্ব ও তাৎপর্যের কোনো কিনারা থাকে না।

সুতরাং এই দিনটিতে কারবালার ইতিহাস যেমন চর্চিত হয়, অন্তত এর সমপরিমাণে হলেও মুসা আলাইহিস সালাম মুক্তি পাবার ইতিহাস ও তাৎপর্য আলোচিত হওয়া উচিত। সর্বোপরি দিনটি ইসলামে ঘোষিত হয়েছে আনন্দের জন্য, এই দিনে অতিমাত্রায় শোকাতুর হয়ে থাকা যেমন উচিত নয়; কারবালার শহিদদেরও আমরা ভুলে যাব না। আমরা বরং কারবালা কেন্দ্রিক বানোয়াট কেচ্ছাকাহিনির মূলোৎপাটন করব; সমস্ত দ্বিনি বিষয়ে শিয়াগ্রস্ততা ও বাতিল চিন্তা থেকে বের হয়ে আসব ইনশাআল্লাহ। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

কারবালাই কি আশুরা?
ওমর আলী আশরাফ
সহযোগী সম্পাদক: সিয়ান পাবলিকেশন



Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi

Next Post Previous Post