বিসর্জনের দ্বিতীয় সত্তা : বাপ্পী খান | Bishorjoner Ditio Sotta

নাম : বিসর্জনের দ্বিতীয় সত্তা
লেখক : বাপ্পী খান
জনরা : সামাজিক থ্রিলার 
প্রচ্ছদ : বাপ্পী খান
প্রকাশনী : বাতিঘর
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১০
মুদ্রিত মূল্য : ১৫০/-



এই নিঃসঙ্গ আর বিষণ্ন রাতের অভিযোগ আমি কার কাছে করব? প্রতি সন্ধ্যায় মরার চেয়ে একবারে মৃত্যুটাই কি শ্রেয় ছিল না?  
-মির্জা গালিব

স্টেশন চত্বরে বসে থাকে লোকটি। নাম হাসিরাজ, মানুষকে হাসিয়ে দু'পয়সা কামানো তার কম্ম। 

গ্রামের সালিশে গরু চুরি নিয়ে বিচার চলছে। একমাত্র সাক্ষী হিসেবে গ্রামের দাদীমাকে হাজির করা হয়। মাতব্বর জিজ্ঞেস করেন, দাদী আমারে চিনেন? দাদীমা বলে উঠে, তুমি মিছাখোররে ছোট থেকেই দেখছি। ঠকবাজ। বউ রাইখ্যা অন্য মাইয়ার পিছে ঘুরো। ভরা মজলিসে মাতব্বর তাজ্জব বনে যায় শুনে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে মাতব্বর এবার আসামীপক্ষের একজনরে দেখিয়ে দিলে দাদী বলে উঠে, ওরেহ ও চিনি। দুনিয়ার ফাজিল। হেউ তিনটা পরকীয়া করছে। তার মধ্যে একটা তোমারই বউ। এই কথা শুনে মাতব্বরের বেহুশের মত দশা সালিশের মধ্যে। এইবার চেয়ারম্যান বলে উঠে, মাতব্বর। আপনি তাড়াতাড়ি বসেন। ভুলেও ওই দাদীরে আমারে চিনে কিনা জিজ্ঞেস করলে আপনার ফাঁসির হুকুম দিমু। 

স্টেশনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে হাসিরাজের কৌতুকে। নানাজন এসে টাকা দিয়ে যায়। বিকেলের দিকে হাসিরাজ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু, অজানা কিছু যেন হাসিরাজকে অনুসরণ করতে থাকে! বাসের টিকেট কেটে এগিয়ে যায় হাসিরাজ গন্তব্যের দিকে। অথচ, সেই দীর্ঘ ছাঁয়ার মত আকারটা হাসিরাজকে পিছু ছাঁড়ে না। তবে কি আজকে হাসিরাজের জীবনে লোমহর্ষক কিছু ঘটতে যাচ্ছে? 
দীর্ঘ পথের সমাপ্তিতে বাস এসে থামে নিজ নিজ গন্তব্যে। সবাই যে যার গন্তব্যস্থলে নেমে যায়। উত্তরার একটু সামনে করে হাসিরাজ তার গন্তব্য এসে নামে। বাস থেকে সে ছাঁয়াটিও নেমে আসে তার সাথে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। নগরীর কোলাহল ছেড়ে হাসিরাজ একটা সুনসান রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। 

পেছনে ধীরে ধীরে সে ছাঁয়াটিও বাড়তে থাকে হাসিরাজকে অনুসরণ করে! তাদের মধ্যে আস্তে আস্তে ব্যবধান কমতে থাকে দূরত্বের। এখন অনেকটা এক হাতের দূরত্ব। যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে মারাত্মক কিছু! হাসিরাজের একটুও আন্দাজা নেই আসলে কি তার পিছু নিয়েছে! হঠাৎ হাসিরাজ এসে দাঁড়ায় একটা কিছুটা পুরোনো বিল্ডিং এর সামনে। মুহুর্তে ছাঁয়াটিও দাঁড়িয়ে যায়। বিল্ডিং থেকে একটা তীক্ষ্ণ আলো এসে পড়ে হাসিরাজের মুখে! 

সবাইকে হাসিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে রাখা স্টেশন চত্বরের ভিক্ষুক হাসিরাজ আসলে কে? কোন বিপদেরই বা সম্মুখীন হয়েছে সে এই অন্ধকার রাস্তায়? 

অন্ধকার ট্রিলজি শেষ করে গতবছর বাপ্পী খানের কিশোর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ক্ষ্যাপার স্বাদ নিয়েছিলাম আমি। লেখকের মতে যদিও ক্ষ্যাপা তার নিরীক্ষামূলক কাজ ছিল। তবুও বইয়ের ব্যাপ্তির বিস্তরণের প্রেক্ষাপটে আমার বেশ ভাল লেগেছিল। বিসর্জনের দ্বিতীয় সত্তাও তেমন অনুভূতি দিয়েছে পড়ার পরে। ছোটোখাটো গড়নের উপন্যাসটিতে প্রচ্ছদ এত স্বয়ংম্ভরা এনেছে, চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতোই। দু একটা টাইপো ছিল চরিত্রের মধ্যে। বাকি সবকিছু বেশ গোছানো। বাতিঘরের প্রডাকশন দিন দিন সমৃদ্ধ লাভ করছে। অজস্র নতুনদের ভালবাসায় এই সমৃদ্ধ হওয়ার পথকে আরো সবিস্তর করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত!

লেখক বইটিতে জীবনের অর্থ নিয়ে বলেছেন, 

হতে পারে ক্রমাগত কোনো স্বপ্নের পিছু ছোটা কিংবা জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব খোঁজা।

অতীতে পিছু ফেরা বারণ, কিন্তু মানুষ তো ভুলেরই দাস। ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিচারণে কী বা আর পাওয়া যায়? সুখ, দুঃখ না কি হাহাকার?

জীবনে সব বিসর্জন তো আর চোখে দেখা যায় না। কিছু ঘটনা আড়ালেও ঘটে। সেসব জানতে চাওয়া বারণ। 

বিসর্জনের দ্বিতীয় সত্তাতে তেমনি ভাবেই লুকিয়ে আছে লেখক বাপ্পী খানের ভাবনায় সাধারণ কিছু মানুষের গল্প, যাদের সাদামাটা জীবনের সাথে ঠিক মিলে যায় আমাদের সমাজের কিছু অবয়ব।

নাগরিক যাপনে বেড়ে উঠা বাপ্পী খানের উপন্যাস  'নিশাচর'। এসেছিল ২০১৮ এ বাতিঘর প্রকাশনীর হাত ধরে। এছাড়া কলকাতার অরণ্যমন প্রকাশনী থেকে 'একা ' ছাড়াও অন্ধকার সিরিজ নিয়ে অলৌকিক জগতের এক দারুণ ব্যাপিকরণ উপস্থাপন করে পাঠকদের মাঝে। ২০২১ এ অন্ধকার ট্রিলজি ছাড়াও কিশোর মুক্তিযুদ্ধের আস্তরণে ক্ষাপায় রাঙিয়ে দেয় বইমেলা। ক্ষ্যাপার সফলতা তাকে এগিয়ে নেয় বিসর্জনের দ্বিতীয় সত্তার কাজে। ক্ষ্যাপাটে এই লেখক ২০২২ সালে হিমঘুম নিয়ে এ বছর কেঁড়ে নেয় শহুরে মানুষের ঘুম নিজস্ব প্রতাপে। মানুষের মাঝে যেমন দানবের বাস, প্রকৃতির মাঝে থাকে স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টির নিনাদ। সেই শক্তিতেই হিমঘুমের পরে লেখক 'নিনাদ' নিয়ে পড়ে রয়েছে আরো একবার আলোড়নের প্রতিক্ষায়। 

জীবনানন্দের সুরে বললে, 

"কেটেছে যে নিশি ঢের,-
এতদিন তবু অন্ধকারের পাইনি তো কোনো টের!
দিনের বেলায় যাদের দেখিনি-এসেছে তাহারা সাঁঝে;
যাদের পাইনি পথের ধূলায়-ধোঁয়ায়-ভিড়ের মাঝে,-
শুনেছি স্বপনে তাদের কলসী ছলকে,- কাঁকন বাজে!
আকাশের নীচে- তারার আলোয় পেয়েছি যে তাহাদের!"




Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi

Next Post Previous Post