অনুরক্ত ক্যানভাস - মুশফিকা রহমান মৈথি


বাড়িওয়ালার গাছের ফুল চু'রি করে পালাতে যেয়ে পা পিছলে বাগানেই মুখ থু'বড়ে পড়লো অন্না। সাথে আগত বান্ধবীরা রীতিমতো মীর জাফরের ন্যায় চুরি করা ফুলগুলো নিয়েই ছুটলো। পাছে যে অন্না কাঁদা মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে সেদিকে তাদের নজর নেই। এদিকে অন্না অনুভব করলো হাটুর কাছে চিনচিনে সূক্ষ্ণ জ্বালা এবং ব্যাথা হচ্ছে। মাথা তুলে চারপাশটা দেখলো বিমূঢ় দৃষ্টিতে। বান্ধবীগুলোর টিকিও নজরে পড়ছে না। আ'হত সৈনিক পিছনে ফেলে নিজ নিজ প্রাণ বাঁচাতে তারা পগারপার। অন্নার রাগ হলো, প্রচন্ড রাগ। সখী সখী করে মাথা খেয়ে ফেলে অথচ আজ সখীকে ছেড়ে পালিয়ে গেলো? অথচ এই বাগানের খোঁজ কে দিয়েছে তোদের? হাটুর যন্ত্রণা, মস্তিষ্কে উত্তপ্ত ক্রোধ এবং বুকের ভেতরে জমায়িত হতাশা নিয়ে খুব কষ্টে উঠে দাঁড়ালো সে। ঠিক তখন ই কানে এলো গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ। হিনহিনে, তেজী স্বরে বললো,
"মানুষ হতে কয় টাকা নিবি?"

কন্ঠটি মস্তিষ্কে ঝংকার তুললো। তড়াক করে পেছনে ফিরলো অন্না। 'যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়'--- প্রবাদটির জলজ্যান্ত প্রমাণ পেলো অন্না। মানুষটি আর কেউ নয় বরং বাড়িওয়ালার একমাত্র পুত্র, অর্জুন দা। অর্জুন দার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অন্নাকে দেখছে। তার কথায় চমকে এবং ভড়কে গেলো অন্না। হা করে কিছুসময় তাকিয়ে রইলো। একেই হাটুর কেটে যাওয়া এবং বান্ধবীদের প্রতারণায় তার বুক জ্বলছে। উপরন্তু লোকটির শান্ত কিন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকে রীতিমতো হীম ধরিয়ে দিচ্ছে।  লোকটার কি সমস্যা জানা নেই, তবে তার চক্ষুশূল যে অন্না তা বেশ ভালো করেই টের পাচ্ছে। তবে অন্নাও কম যায় না। সেও ফেলনা নয়। তাকে রীতিমতো কথার খোঁটায় অমানুষ আখ্যা দেওয়াটা মোটেই ভালো লাগে নি। বরং চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটে উঠলো। ঠোঁট বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলেই দিলো,
 "আমি টাকা টুকা নেই না। আমার হিসেব ডলারে হয়। পারবে দিতে? তাহলে বের করো কড়া কড়া ১০০০ ডলারের নোট"

অর্জুন ভেবেছিলো মেয়েটি তাকে ভয় পাবে। ভয়ে কাঁপাকাপি করবে। কেঁদেকেটে বলবে "অর্জুন দা ক্ষমা করে দাও"। কিন্তু অন্নার কথায় আক্কেলগুড়ুম হবার জোগাড়। অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো অন্নার দিকে। তার মুখে ভাষা নেই। যে তেজে সে কথাটা বলেছিলো, তেজটা সেই আছে; কিন্তু কথাগুলো মুখ থেকে বের হচ্ছে না। শ্যাম মুখখানা রক্তিম হয়ে উঠলো। কপালের শিরা দপদপ করছে! পিদ্দি একটা মেয়ে কিনা ডলারের জোর দেখায়! মানা যায়?

অর্জুনের স্তম্ভিত মুখখানা দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলো অন্না। এখন ই সময়, পালানোর। লোকটি কথা গোছাবার আগেই ছুটতে হবে। নয়তো তার হুংকারের প্রকোপ থেকে বাঁচা মুশকিল। লোকটির কিছু একটা তো সমস্যা আছেই অন্নার সাথে। কখনোই অন্নার কাজ তার পছন্দ নয়। আজ পাঁচ বছর হবে একই বাড়ির উপর নিচ থাকে কিন্তু ইহজীবনে হেসে কথা তো দূর, স্বাভাবিক মুখেও কথা বলে না। চশমায় ঢাকা চোখগুলো সর্বদাই বিরক্তিতে কুচকে থাকে। নেহাত দাদার বন্ধু তাই একটু হলেও ছাড় পায়। তবে আজ সেই সম্ভাবনা নেই ই। মাঝে মাঝে আফসোস ও হয় অন্নার! অবশ্য এখন সেই আফসোসের মাথায় পানি ঢেলে দিয়েছে। এখন পালানোই হলো মুখ্যম কাজ। অন্না তার গলার জোর একই রেখে বললো,
 "মুরোদ নেই নাকি? তাহলে আমি গেলাম"

ঠিক তখন ই অর্জুন খেঁকিয়ে উঠে বললো,
 "এই দাঁড়া! একে আমাদের গাছের ফুল চুরি করিস আবার আমাকে ডলার চেয়ে মুরোদ দেখাস? সাহস দেখে তাজ্জব হয়ে যেতে হয়"
 "ফুলের উপর কি নাম লেখা আছে? সব ই ঈশ্বরের দান। আর আমিও ঈশ্বরের সৃষ্ট ক্ষুদ্র মানব। ঈশ্বরের সৃষ্টি, ঈশ্বরের দান কুড়োচ্ছে এটা কি পাপ নাকি? তুমি তো হার কিপটে অর্জুন দা। সামান্য ফুলের জন্য আমাকে চো'র বানিয়ে দিলে। কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে যে আমি চুরি করেছি? দাও দাও প্রমাণ দাও।"

অর্জুনের কাছে প্রমাণ নেই। সে স্বচক্ষেও অন্নাকে ফুল ছিড়তে দেখে নি। রোজ ভোরের ন্যায় আজ ও সে প্রাতঃকালে হাটাহাটি করতেই এসেছিলো বাগানে। অর্জুনের একটা ধারণা রয়েছে যা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। প্রাতঃকালে না হাটলে তার ঘটে বিদ্যাদেবীর কৃপা হয় না। তাই তো কলেজের স্ট্যান্ড করা ছেলে প্রতিদিন সকালে আধ ঘন্টা পায়চারী করে। এতে করে তার পড়া মুখস্থ হয়। আজ ও তাই এসেছিলো। তখন ই দেখলো বাগান থেকে পিঁপড়ের মতো চার পাঁচটা মেয়ে ছুটে বের হচ্ছে এবং তাদের সনামধন্য ভাড়াটে কন্যে মুখ থুবড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার ধারণা এখানে চন্ডিপাঠ করার উদ্দেশ্যে এদের আগমণ হয় নি। এসেছে হয় কামরাঙ্গা চু'রি করতে নয় তার শখের শিউলি গাছের দফারফা করতে। তাই তো সময় পার না করেই ছুটলো অন্নাকে শাষাতে। কিন্তু এই মেয়ে উলটো তাকে শাষিয়ে চলছে। অর্জুন কটমট করে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটির দিকে। অন্না বুঝলো সে বেশ ভালো দাও চেলেছে। এই সুযোগ পালানোর। সে একটু করুন কন্ঠে বললো,
 "আমি আর কোনোদিন তোমাদের বাগানে আসবো না। ভাড়া থাকি বলে আমাকে তুমি চোর বললে। মনে থাকবে। আজ ই জ্যেঠুকে বলবো যেনো নতুন বাড়ি দেখে। তোমাদের পুরান ভু'তের বাড়ি থাকার চেয়ে নতুন নতুন ভালো বাড়ি থাকবো সেই ভালো"

বলেই মুখ ঘুরিয়ে খু'ড়িয়ে খু'ড়িয়ে হাটা শুরু করলো অন্না। অর্জুন আরেকদফা টাস্কি খেলো। সে এখনো হা করেই চেয়ে রয়েছে। তার মস্তিষ্ক যেনো হুট করেই কম্পিউটারের উইন্ডোজ শাট ডাউনের মতো বন্ধ হয়ে গেছে। মেয়েটি তাকে শুধু শাষালোই না। উলটো তাদের এই তিনকুলের বাড়িকে কিনা মুখের উপর বলে দিলো "ভু'তুড়ে বাড়ি"। মানা যায়? এইটা কি মেয়ে নাকি চলন্ত কোনো ধানী লংকা!

******

বাগান থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে যেতেই মীরজাফরের দলের সাথে দেখা হলো। তারা নতমস্তক দাঁড়িয়ে আছে সদরে। হাতে ফুলের টুকরি। তামিমা একটু রয়ে সয়ে বললো,
 "অর্জুন দা কি বললো রে?"
 "বলেছে যে তার ফুলের গাছের রফাদফা করেছে তাদের এক এক টার পোস্টার তুলে পাড়ার দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে দিবে। আর কপালে লিখে দিবে "ফুল চোর""
 "তুই নাম বলিস নি তো?"
 "বলবো না কেনো? তোদের সব ক'টার নাম বলেছি। গুনে গুনে, তাও নামের বানান সহ"
 "তুই এমনটা করতে পারলি? আমরা তো তোর সখী"

বেশ করুন কন্ঠে কথাখানা বললো দীপ্তি। অন্না তখন বত্রিশখানা দাঁত বের করে বললো,
 "কেনো বাপু আমাকে ওখানে বাঘের মুখে ছেড়ে আসার সময় মনে ছিলো না আমি তোমাদের সই? তোদের জন্য আমি ওই লোকটার কত কথা শুনেছি। শুধু তাই নয়, আমার পায়ের হাটুটাও ছিলে গেছে। আর আমি তো ফুল ধরিও নি। তোরা ধরেছিস"

অন্নার কথায় মীরজাফরের দল একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো। তারপর সবচেয়ে বুদ্ধিমান সামিহা অন্নার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
 "ক্ষমা করে দে সই। এই কান ধরছি। রাগ করিস না। মাকে বলবো আজ বিরিয়ানি রাঁধতে। তোর জন্য আমি আজ বিকেলেই নিয়ে আসবো। তুই রাগ করিস না"
 "হ্যা, ভাইয়া যে চকলেট বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে তাও তোর জন্য নিয়ে আসবো তুই রাগ করিস না"
 "আমি কুলের আঁচার আনবো"

একেকজন সুন্দরমতো পাল্টি দিলো। অন্না বুঝলো এদের মতলব। অবশ্য যে ভয় দিয়েছে তাতে তারা আর বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। কারণ এই পাঁড়ার সবাই অর্জুনদাকে ভয় পায়। যাক অর্জুন দা কোথাও তো কাজে দিলো____

*******

বান্ধবীদের সাথে এপাঁড়া ও পাঁড়া করে বাড়ি ফিরলো দুপুর নাগাদ। সদর দরজায় দু ঘা দিতেই রণচন্ডী মা দরজা খুললো। রিতাদেবী কটমট করে চেয়ে আছে অন্নার দিকে। অন্না মুখে প্লাস্টিকের হাসি এঁকে বললো,
 "কিছু বলবে মা?"

সাথে সাথেই তার কা'ন চলে গেলো রিতাদেবীর হাতে। সজোরে টানতে টানতে গৃহপ্রবেশ হলো অন্নার। অন্না "আহ, উহ" করতে লাগলো। কিন্তু রিতাদেবীর দয়া হলো না। আজ তার কান ছি'ড়েই দম নিবেন তিনি। এদিকে অবন্তীকা দেবী বলতে লাগলেন,
 "সে'না মেয়ের কান টে'নো না রিতা। মেয়ে বড়ো হয়েছে। এখন কলেজে পড়ে"
 "তাতে কি, স্বভাব তো এখনো আবুদ্দার মতো। এই কোথায় ছিলি তুই? আর কি বলেছিলি হিসাব বিজ্ঞানে কত পাবি?"

হুট করে হিসাববিজ্ঞানের কথা আসতেই অন্নার মাথায় বাজ পড়লো। পরীক্ষার ফলাফল চলে এসেছে? এই না গত সপ্তাহে পরীক্ষা দিলো। আমতা আমতা করে বললো,
 "নব্বই"
 "মহারানী নয় পেয়েছেন, সে খবর আছে?"
 "স্যার রা কি নব্বই উলটে দিলো? মা বিশ্বাস করো আমি নব্বই পাবো"

প্রদীপ বাবু প্রমাণ সমেত খাতা নিয়ে এসেছে। অন্না সত্যি ই নয় পেয়েছে। কোথায় ভেবেছিলো নয়ের পিঠে শূন্য পাবে সেখানে শূন্যের পিঠে নয় ভাগ্যে জুটেছে। অর্থাৎ সে এবার হিসাববিজ্ঞানে ফেল করেছে, ডাহা ফেল! অন্যান্য বিষয়ে যে পাশ করেছে তাও নয়। ফিনান্সে কোনোমতে ত্রিশ, অর্থনীতিতে পয়ত্রিশ, ব্যাবসায় সংগঠন এবং ব্যাবস্থাপনায় ছাব্বিশ। পরীক্ষার কোনো বিষয়েই সে ভালো করে নি। ভালো তো দূরে থাক, সে ফেল করেছে। অন্নার মুখখানা মিয়ে গেলো। নতমস্তক এক কোনায় দাঁড়িয়ে রইলো। ঠিক তখন ই দ্বিতীয় বারের মতো তার মাথায় বজ্রপাত হলো যখন রিতাদেবী বলে উঠলেন,
 "এখন থেকে বাহিরে যাওয়া বন্ধ৷ সন্ধ্যে থেকে পড়তে বসবি। আর আজ সন্ধ্যে থেকে তোর টিউটর আসবে। আমি অর্জুনকে বলেছি, ও আজ থেকে তোমাকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পড়াবে"........

চলবে

(আসসালামু আলাইকুম, আবার ফিরে এলাম ছোট একটি গল্প নিয়ে। গল্পটি বড় নয়, ৪-৫ পর্বের আশা রাখছি ভালো লাগবে। আমার প্রথম ই-বুক ❝অনুরক্ত ক্যানভাস❞ পেয়ে যাবেন বইটই এপে)



Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi

Next Post Previous Post