হযরত শেখ সাদী (রহঃ) এর জীবন কাহিনী | শেখ সাদীর গল্প - Biography Of Sheikh Sadi Bangla

উদারতা ও স্বর্গের শান্তির বাণী নিয়ে সময় সময় যে যে সবল মহাপুরুষ মর্ত্যের তথ্য গ্রহণ করেন এবং জগতের কিঞ্চিত যথার্থ কল্যাণ সাধন দ্বারা মানুষের অক্ষয় পদচিহ্ন রেখে যান, শেখ সা'দী (রঃ) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সীমাহীন তার মধ্যেও তিনি ধর্য্যের সাথে জ্ঞান অর্জন, পদব্রজে দেশ ভ্রমণ, কাব্য ও সাহিত্য এবং আধ্যাত্মিক চিন্তার মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিলেন সারাটা জীবন । ডাক ও তার প্রথার হয়নি, 


পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত শত শত পত্র পত্রিকার অবাধ প্রচার যখন ছিল না; লঞ্চ, বাস, ট্রেন কিংবা প্লেনে চড়ে পৃথিবী ভ্রমণ করা যখন সম্ভব ছিল না; ধর্ম সাহিত্য ও ইতিহাসের অভিনব বার্তা যখন জনগণের নিকট পৌঁছবার কোন সুযোগ ছিল না, তখন শেখ সা'দী (রঃ) নৈশ নক্ষত্রের ন্যায় আপন অনাড়ম্বর কিরণ ধারা উৎসারিত করে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে সে আলোক রশ্মি বিতরণ করতেন ।

হযরত শেখ সাদী (রহঃ) এর জীবন কাহিনী

হযরত শেখ সাদী (রহঃ) এর জীবন কাহিনী

স্যার আউসলী এর মতে ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের ফারেস প্রদেশের অন্তর্গত সিরাজ নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আয়ু ১২০ বছর। তবে তাঁর জন্ম ও মৃত্যু সাল নিয়ে মতভেদ আছে । কারো কারো মতে তাঁর জন্ম সাল ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ এবং আয়ু ১০২ বছর। 


কিন্তু মুজাফফর উদ্দীন আতাবেক সা'দ বিন জঙ্গীর রাজত্বকালে যে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তাতে কোন দ্বিমত নেই । বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল শেখ মোসলেহ উদ্দীন । জানা যায়, ফারেসের শাসনকর্তা আতাবেক সা'দ বিন জঙ্গীর রাজত্বকালে তিনি যখন কবিতা লিখতেন তখন আপন নামের সাথে 'সা'দী' লিখতেন এবং এ নামেই তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন । সা'দীর পিতা রাজ দরবারে চাকুরী করতেন এবং তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক। ফলে শৈশব থেকেই সা'দীর পিতা রাজ দরবারে চাকুরী করতেন এবং তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক । 


ফলে শৈশব থেকেই সা'দী ধর্মীয় অনুশাসনের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেন। কোন অসৎ সঙ্গ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। শৈশবেই তাঁর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় অসাধারণ প্রতিভা । শিক্ষা লাভের প্রতি ছিল তাঁর অস্বাভাবিক আগ্রহ। কিন্তু শৈশবেই পিতা মৃত্যু বরণ করায় তিনি হয়ে পড়েন নিতান্ত ইয়াতীম ও অসহায়। পিতার আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। সরকারী চাকুরী করে পিতা যে সামান্য বেতন পেতেন তা দিয়েই খুব কষ্ট করে তাঁকে সংসার চালাতে হত। কিন্তু পিতার মৃত্যুতে সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা এবং তাঁর শিক্ষা লাভের উপর আসে মারাত্মক আঘাত। কিন্তু এ অসহায়ত্ব ও দারিদ্রের মধ্যেও তিনি ধৈর্য্য হারাননি। শেখ সা'দী (রঃ) এর জীবনকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় । প্রথম ৩০ বছর শিক্ষা লাভ, দ্বিতীয় ৩০ বছর দেশ ভ্রমণ, তৃতীয় ৩০ বছর গ্রন্থ রচনা এবং চতুর্থ ৩০ বছর আধ্যাত্মিক চিন্তা ও সাধনা।


পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিরাজ নগরের গজদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। কারো মতে আশ্রয় দান বিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। উক্ত মাদ্রাসায় নিশ্চিত মনে বেশী দিন শিক্ষা ফারাসের শাসনকর্তা আতাবেক সা'দ বিন জঙ্গী দয়াপর্বশ হয়ে স্বয়ং ইয়াতাম শেখ সা'দীর লাভ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কারণ তখন রাজ্যের সর্বত্র রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা অশান্তি বিরাজ করছিল। তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় দারিদ্রের সাথে লড়াই করে চলে প্রতিষ্ঠান। বাগদাদে এসে তিনি অনাহারে, অর্ধাহারে এবং আশ্রয়ের অভাবে দিনের পর দিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। 


অতঃপর তিনি একজন সহৃদয় ব্যক্তির সহযোগিতায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে শিক্ষা লাভ শুরু করেন। তাঁর প্রতিভা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং শিক্ষা লাভে তার অসাধারণ পরিশ্রমের প্রেক্ষিত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর প্রতি শিক্ষকগণের সুদৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এরপর তিনি ভর্তি হন বাগদাদের নিযামিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে তিনি বিখ্যাত আলেম আল্লামা আবুল ফাতাহ ইবনে জওজী (রঃ) এর নিকট তাফসীর, হাদিম ও ফিকাহ শাস্ত্র শিক্ষা লাভ করেন । অল্প দিনের মধ্যেই তিনি মাদ্রাসার প্রধান ছাত্র হিসেবে পরিগণিত হন এবং মাসিক বৃত্তি লাভ করেন । 


মাত্র ৩০ বছর বয়সে। তিনি তাফসীর, হাদিস, ফিকাহ, সাহিত্য, দর্শন, খোদাতত্ত্ব ও ইসলামের বিবিধ বিষয়ে অসামান্য পান্ডিত্য অর্জন করেন। আল্লামা শেখ সা'দী (রঃ) শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভেই সন্তুষ্ট ছিলেন না; বরং আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের প্রতিও ছিল তাঁর অস্বাভাবিক আগ্রহ। শেখ সাদী (রঃ) এর জন্মের ১০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১১৬৫ খ্রিঃ (৫৬১ হিঃ) তোপসশ্রেষ্ঠ শেখ আবদুল কাদির জিলানী (রঃ) ইন্তেকাল করেন । তাঁর অলৌকিক তপঃ প্রভাবের কথা সমগ্র বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। শেখ সা'দী (রঃ) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের অবসর সময়ে ধন্য পুরুষদের আশ্রমে গিয়ে অতীন্দ্রিয় জগতের তথ্য সংগ্রহ করতেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি তৎকালীন তপস শেখ শাহাবুদ্দিন (রঃ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ধন্য পুরুষদের সঙ্গ লাভে অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর ধর্মগত প্ৰাণ তত্ত্বজ্ঞান ও পুণ্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল ।


৩০ বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর শুরু হয় তাঁর ভ্রমণ জীবন। জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করার মানসে সংসার বৈরাগীর ন্যায় খালি হাতে তিনি পদব্রজে বিচরণ করেছেন জগতের বিভিন্ন দেশ এবং নানা স্থানে উপদেশ বিতরণের মাধ্যমে লোকদের ধর্ম ও সভ্যতার পথে উন্নীত করেছেন । 


স্যার আউসলী'র মতে প্রাচ্য জগতে সুবিখ্যাত ইবনে বক্তৃতার পরে পরিব্রাজক হিসেবে যার নাম শীর্ষে রয়েছে, তিনি হলেন মাওলানা শেখ সা'দী (রঃ)। উদব্রজ বা উষ্ট্রপৃষ্ঠ ব্যতীত যখন মরুভূমি পার হবার কোন উপায় ছিল না তখন শেখ সা'দী (রঃ) শ্বাপদসঙ্কুল ও অসভ্য বর্বর অধ্যুষিত জনপদের শত সহস্র বিপদ উপেক্ষা করে পদব্রজে ভ্রমণ করেছিলেন দেশ থেকে দেশান্তরে। 


তিনি সমগ্র পারস্য, এশিয়া মাইনর, আরবভূমি, সিরিয়া, মিসর, জেরুজালেম, আর্মেনিয়া, আবিসিনিয়া, তুর্কিস্তান, ফিলিপাইন, ইরাক, কাশগড়, হাস, ইয়ামন, শাম, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, হিন্দুস্তানের করতে গিয়ে তাঁকে পার হতে হয়েছিল পারস্য উপসাগর, ওমান সাগর, ভারত মহাসাগর, সোমনাথ ও দিল্লীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পদব্ৰজে ভ্রমণ করেছিলেন। এ সময় দেশ ভ্রমণ। আরব সাগর প্রভৃতি। এ সুদীর্ঘ সফরের ফলে তিনি বিশ্বের ১৮টি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন। করেছিলেন। পদব্রজে তিনি হজ্জ সম্পাদন করেছিলেন ১৪ বার। তাঁর এ ভ্রমণ কাহিনী


তিনি তাঁর গুলিস্তা ও বোস্ত৷ বিভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। 


যে হর খিরমানে খোশা ইয়াফতাম।” অর্থাৎ-

“সমিয়াছি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রদেশ, মিলিয়াছি সর্বদেশে সবাকার সনে, প্রতি স্থানে জ্ঞানে রেণু করি আহরণ, প্রতি মৌসুমে শস্য করেছি ছেদন।”

বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে শেখ সা'দী (রঃ) অর্জন করেছিলেন বিবিধ জ্ঞান; তাঁর চোখের সামনে ঘটেছিল বহু বিচিত্র ঘটনা, তিনি অবলোকন করেছিলেন জাতির উত্থান, পতনের ইতিহাস । কর্ডোভার মুসলিম সাম্রাজ্য যার ঐশ্বর্যে একদিন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা প্রভাবান্বিত হয়েছিল তা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শেখ সা'দী (রঃ) এর চোখের সামনে নিশ্চিহ্ন হয়ে ধরা পৃষ্ট হতে মুছে গিয়েছিল। এ শতকেই সেলজুক এবং খাওয়ারিজম শাহীর আত্মদ্বন্দ্ব উভয় সাম্রাজ্যের মূল উৎপাটন করে ফেলেছিল। 


বনি আব্বাসদের রাজ বংশ যা প্রায় সাড়ে পাঁচশ' বছর বিপুল বিক্রমে রাজত্ব করেছিল, তাও এ শতকে ধ্বংস গিয়েছিল। সা'দী (রঃ) দেখেছিলেন দুর্ভিক্ষের হাহাকার। মিসর ও পারস্যের দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ হানি দেখে তাঁর হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছিল। যে দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খাঁর নামে আজও সমগ্র এশিয়ার লোক শিহরিত হয়, তারই পোত্র নৃশংস হালাকু খান এক বিরাট তাতার বাহিনী নিয়ে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদের উপর আপতিত হয়েছিল। বর্বরদের নির্মম আক্রমণে ইসলামের শেষ খলিফা মোতাসেম বিল্লাহ নির্দয় ভাবে নিহত হলেন । এরপর শুরু হল নির্মম গণহত্যার অভিনব। 


নারী পুরুষের অকলঙ্ক শোণিতে রাজপথ, গৃহ ও টাইগ্রাসের পানি রঞ্জিত হল । বাগদাদ পরিণত হল এক মহা শ্মশানে। ইবনে খালদুন লিখেছেন, বিশ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ষোল লক্ষ লোক এ আক্রমণে নিহত হয়েছিল । শেখ সা'দী (রঃ) গুলিস্তার প্রথম অধ্যায়েই এ সকল জালেমদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী পরিচালনা করেছেন । তাঁর প্রায় সমগ্র কাব্য গ্রন্থের ভিতরই জালেম বাদশাহর উপর তাঁর শেষ বাক্য ও অবজ্ঞার চিহ্ন বিচ্ছুরিত দেখতে পাওয়া যায় ।

দেশ ভ্রমণে নিষ্ঠুর, জালেম ও বর্বরদের হাতে সা'দীকে কতবার যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই । 


দ্বাদশ শতাব্দীতে ফিলিস্তিনীতে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ যখন চরম আকার ধারণ করে তখন খ্রিস্টানদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্যে শেখ সা'দী (রঃ) নিকটস্থ এক নির্জন জঙ্গলে আশ্রয় নেন। খ্রিস্টানগণ জঙ্গল থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরী হতে আনীত ইহুদিদের সাথে তাঁকে পরিখা খননে নিযুক্ত করে। তখন তাঁর দুরাবস্থার সীমা ছিল না। 


একদিন আলিপ্পো শহরের এক সম্ভ্রান্ত বণিক (সা'দীর এক সময়ের পরিচিত) সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শেখ সা'দী (রঃ) তাঁকে দেখে সমুদয় ঘটনা বললেন । এতে বর্ণিত দয়াপরবশ হয়ে মনিবকে ১০ দিনার ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁকে মুক্ত করে সাথে করে আলিপ্পো শহরে নিয়ে যান। কিন্তু আলিপ্পো শহরেও তিনি সুখ পাননি। বণিকের এক বদমেজাজী ও বয়স্কো কন্যা ছিল। তার বদমেজাজের কারণে কেউ তাকে বিয়ে করতে রাজি হত না। ৰণিক ১০০ দিনার মোহরের বিনিময়ে কন্যাকে শেখ সা'দীর নিকট বিয়ে দেন এবং মোহরের অর্থ বণিক নিজেই পরিশোধ করেন । সা'দী বিপদে আপদে কখনো ধৈর্য্যহারা হতেন না। বিয়ের পর কবি শেখ সাদী (রঃ) আর সুখের মুখ দেখতে পেলেন না। 


বদমেজাজী রমণী একদিন সহসা বলে ফেলল যে, তুমি কি সেই হতভাগ্য নও, যাকে আমার পিতা অনুগ্রহ করে ১০ দিনার মূল্য দিয়ে স্বহস্তে মুক্ত করেছিলেন? উত্তরে শেখ সা'দী (রঃ) বললেন, “হ্যাঁ সুন্দরী! আমি সেই হতভাগ্য, যাকে তোমার পিতা ১০ দিনার দিয়ে মুক্ত করেছিলেন, কিন্তু পুনরায় ১০০ দিনার দিয়ে তোমার দাসত্বে নিযুক্ত করে দিয়েছেন।” সম্ভবত আল্লাহ পাক তার প্রিয় অনটন ও দুঃখ কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন।


প্রকাশের জাদু পাঠকদের মনকে বিস্ময় বিমুগ্ধ করে রাখত। আজও তার লেখা কাব্য গ্রন্থ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা পবিত্র কোরআন শিক্ষার পরই তাঁর রচিত কাব্য গ্রন্থ কারিমা, গুলিস্তা কারিমা, গুলিস্তা ও বোস্তা বিশ্বের বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় পাঠ্য তালিকার অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় সভায় শেখ সা'দীর কবিতা আবৃত্তি করে থাকেন। তাঁর ও বোস্তা শিক্ষা লাভ করে থাকে। তার সমস্ত রচনাই অতি সরল ও প্রাঞ্জল। আলেমগণ কবিতা আবৃত্তি না করলে আলেমগণ যেন ওয়াজ মাহফিল জমাতে পারেন না। শিশুরা শেখ সাদীর কারিমা গ্রন্থের কবিতা সুললিত কন্ঠে


“কারিমা ব-বংশায়ে বর হালে মা কে হাজম আসীরে কামান্দে হাওয়া । না দারেম গায়ের আযতু ফরিয়াদ রাস্ তু-য়ী আসীয়ারা খাতা বখ্শ ও বাস্ । নেগাহ্দার মা'রা যে রাহে খাতা

খাতা দার গোয়ার ও সওয়ারম নমা। 

অনুবাদ- পাঠ করতে থাকে-

হে দয়াময় প্রভু! আমার প্রতি রহম কর। আমি কামনা ও বাসনার শিবিরে বন্দী । তুমি ব্যতীত আর কেউ নেই, যার নিকট আমি প্রার্থনা করব। তুমি ব্যতীত আর কেউ ক্ষমাকারী নেই। তুমি আমাকে পাপ থেকে রক্ষা কর। আমার কৃত পাপ ক্ষমা করে পুণ্যের পথ প্রদর্শন কর।


শেখ সা'দীর গুলিস্তা ও বোস্তা বিশ্ব কাব্য ও সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। গুলিস্তা ও বোস্তা ব্যতীত জগতে এমন গ্রন্থ খুব কমই আছে যা বহু যুগ ধরে বিপুল ভাবে পঠিত হয়ে আসছে। ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে জেল্টায়াস নামক এক ব্যক্তি ল্যাটিন ভাষায় আমস্টারডাম নগরে 'ব্রোসারিয়াম পলিটিকাম' নাম দিয়ে গুলিস্তার অনুবাদ প্রকাশ করেন। 


১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে উহা ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখ সা'দীর গুলিস্তাসহ বিভিন্ন কিতাব ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, আরবী, ডাচ, উর্দু, তুর্কি, বাংলা প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। শেখ সা'দী (রঃ) এর উপরোক্ত গ্রন্থগুলো ব্যতীত 'নসিহত-অল-মলুক', 'রিসালায়ে আকিয়ানো', 'কিতাবে মিরাসী', 'মোজালেসে খামসা', 'তরজিয়াত', রিসালায়ে সাহেবে দিউয়ান,' 'কাসায়েদল আরবী,' 'আৎ তবিয়াত,' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।


শেষ বয়সে শেখ সা'দী (রঃ) মাতৃভূমি নগরের এক নির্জন আশ্রমে জীবন যাপন করতেন। এ স্থানেই তিনি অধিকাংশ সময় গভীর ধ্যানমগ্ন থাকতেন। মাঝে মাঝে আগন্তক ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেয়ার জন্যে আশ্রমের বাইরে যেতেন। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ধনী, গরীব, শিক্ষিত, মূর্খ, রাজা প্রজা এবং নিকট সমবেত হত। 


শেখ সা'দী (রঃ) বাল্যকাল থেকেই দৈনিক ৪/৫ ঘণ্টা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি কখনো গৃহে বেনামাজী চাকর নিয়োগ করতেন না। আস্তে আস্তে তাঁর বার্ধক্য ঘনিয়ে আসে। বার্ধক্যেও তিনি যৌবনের তেজ ধারণ করতেন। অবশেষে ১২৮২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬৯১ হিজরীতে ১২০ বছর বয়সে এ মনীষী ইহলোক ত্যাগ করেন। সিরাজ নগরের দিলকশা' নামক স্থানের এক মাইল পূর্ববর্তী পাহাড়ের নিচে তাঁর সমাধি রয়েছে। 





Next Post Previous Post