বর্ষাকাল বাংলা প্রবন্ধ রচনা | গ্রীষ্মকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

বর্ষাকাল: বর্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ঋতু। গ্রীষ্মের পর বর্ষা আসে মেঘের মাদল বাজিয়ে। অন্যান্য ঋতু নীরবে আসে, নীরবে যায়। কিন্তু বর্ষা আসে মেঘের পিঠে চড়ে, বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে, বস্ত্রের ঢাকঢোল পিটিয়ে। 

বর্ষাকাল বাংলা প্রবন্ধ রচনা
 

কবি বলেছেন,

ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে জলসিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভরভসে

ঘনগৌরবে নব যৌবনা বরধা শ্যামগম্ভীর সরসা।


বর্ষাকাল বাংলা প্রবন্ধ

বর্ষার সময় ও কারণ ঃ মূলত আষাঢ় ও শ্রাবণ- এ দুই মাস বর্ষাকাল। কিন্তু ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত এর জের চলে। আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসবার সময় প্রচুর জলীয়বাষ্প বহন করে আনে এবং এই জলীয়বাষ্প উত্তরে হিমালয় পর্বতে বাধা পেয়ে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় 

প্রাকৃতিক দৃশ্য ঃ বর্ষার প্রাকৃতিক দৃশ্য বড়ই মনোরম। বর্ষা নামে সাড়ম্বরে সেজেগুঁজে গুরুগম্ভীর রূপে। সে আসে দিগ্বিজয়ী যোদ্ধার মতো। হঠাৎ আকাশে মেঘের আড়ালে চমকে উঠে বিদ্যুৎ। বইতে থাকে দমকা হাওয়া। 

এক সময় নেমে আসে বৃষ্টি। কখনো টিপ টিপ, কখনো-বা মুষলধারে, কখনো-বা কিছুক্ষণ, কখনো-বা দিনের পর দিন। এ সময় ডাহুকের একটানা গান বেশ ভালো লাগে। পুকুর-ডোবাতে ব্যাঙগুলোর ডাকে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। রাতে চাঁদের কিরণে মাঠঘাট এক অপরূপ শোভা ধারণ করে। পরিপূর্ণ বর্ষা যখন নামে আকাশ ছেয়ে বাদল নামে তখন বাইরে যাওয়া যায় না। কবি বলেন,

“কালি মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে

ওগো আজ তোরা যাস নে, ঘরের বাহিরে।”

বর্ষার পুষ্প ঃ এ সময় যুঁথিকা, চামেলী, রজনীগন্ধা, মল্লিকা, টগর, হাসনাহেনা, কদম প্রভৃতি পুষ্পের সৌরভে চারদিক আমোদিত হয়। বনে-জলাশয়ে নানাপ্রকার ফুল ফোটে। এসব ফুলের দৃশ্য বাংলাদেশের শোভাকে অতুলনীয় করে তোলে । উপকারিতা ঃ বর্ষার উপকার, অপকার দুটোই আছে। তবে অপকারের চেয়ে উপকারই বেশি। 

আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ কৃষিকাজের জন্য বর্ষার পানির উপর নির্ভর করতে হয়। বর্ষার পানি চারদিকের ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে যায়। এতে রোগের জীবাণু ধৌত হয়ে যায়। বর্ষার আগমনে গাছপালা নতুন জীবন লাভ করে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়। বর্ষাকালে জলপথের চলাচল সহজ হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়।

অপকারিতা ঃ অতিরিক্ত বর্ষার ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। তখন দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এ সময় পানীয় জলের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দূষিত পানি পান করার ফলে কলেরা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

উপসংহার

মোটের উপর অপূর্ব রূপশ্রী নিয়ে বর্ষা এদেশে আগমন করে। বাংলাদেশের শ্যামল নয়নাভিরাম দৃশ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ষারই অবদান। বস্তুত বর্ষার রূপ বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব সম্পদ।






Next Post Previous Post