আমার শৈশব স্মৃতি প্রবন্ধ রচনা | শৈশবের স্মৃতি কথা

আজকে যা বাস্তব ঘটনা, তা-ই আগামীদিনের স্মৃতি। বয়সের মাপকাঠিতে আমরা এখন তরুণ। শৈশবের বিভিন্ন ঘটনা এখন স্মৃতির খাতায় জমা হয়েছে। অবশ্য সব ঘটনাই যে স্মৃতিতে বেঁচে আছে, তা নয়। 


আমার শৈশবের স্মৃতি কথা

কিছু কিছু ঘটনাই কেবল স্মৃতি হিসেবে পরবর্তীকালে টিকে থাকে। আমার শৈশব জীবনেরও কতকগুলো ছোট-বড় ঘটনার কথা স্মৃতির খাতায় জন্য হয়েছে। এখানে আমি আমার সোনালি শৈশবের কয়েকটি স্মৃতি উল্লেখ করব।

আমার শৈশবের স্মৃতি কথা

আমার শৈশব স্মৃতি ঃ প্রথমেই উল্লেখ করব আমার শৈশবে নাট্যাভিনয়ের একটি ঘটনা। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আমাদের গ্রামের যুবকরা একটি নাটক মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাস ছয়েক ধরে চলেছিল রিহার্সেল। আমি একজন দরিদ্র চাষির ছোট্ট মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। 


অবর্ণনীয় উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে আমরা সকলে অভিনয় করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। আজো স্পষ্ট সে স্মৃতি আমার মনে পড়ে। দরিদ্র চাষির নাবালিকা কন্যা আমি। দুদিন ঘরে ভাত নেই। চাষি কোথাও থেকে কিছু রোজগার করতে পারছে না। তাই দুদিন চলে উপবাস। 


তৃতীয় দিন একজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে চাষি সের খানেক চাল আনে। আমি তখন উদর জ্বালায় কাঁদছি। চাষি এলে আমাকে কোলে নিয়ে চুমু খায় এবং বলে, “আর কাঁদিস না মা—চলে এসেছি।” আমি চালের পুঁটলাটা তার হাত থেকে নিয়ে মার কাছে আসি এবং বলি “মাগো খিদের জ্বালায় বাঁচি না, তাড়া করে ভাত বসাও।” 


কোনো শীর্ণদেহী বালিকা ভিক্ষুক দেখলেই এ কথা কয়টি আমার কেন জানি বিশেষ করে মনে পড়ে। আমার শৈশবের সাথে আমার নানার বাড়ি ও নানি বিশেষভাবে জড়িত। নানার বাড়িতে থেকেই আমি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করি। 


নানার বাড়ির ছোট সংসারে আমি ছাড়া আর কোনো ছোট ছেলেমেয়ে ছিল না। তাই বোধ করি নানি আমাকে অত্যন্ত আদর করতেন। শীতের সকালে তিনি আমাকে উঠানে রোদে নিয়ে বসতেন এবং গুড়-মুড়ি খেতে দিতেন। আজ সে স্নেহময়ী নানি বেঁচে নেই । কিন্তু আমার স্মৃতিতে সে-সব দিনের কথা আজো অম্লান ।


আমার শৈশবের আরেকটি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেই এ লেখার সমাপ্তি টানতে চাই। সে ঘটনাটি আমার প্রতিবেশী মামাতো বোনকে নিয়ে । সে ছিল আমার খেলার সাথী। 


তার সাথে হররোজ আমি ধুলোবালি নিয়ে খেলতাম। একসাথে হুজুরের কাছে মসজিদে আরবি পড়তাম, একই শিক্ষকের কাছে স্কুলের বইয়ের পাঠ নিতাম। দুজনে সারাদিন একসাথে ঘোরাফেরা করতে দেখে প্রতিবেশী নানিরা বলতেন, আমাদের দুটিকে নাকি বেশ মানায়। 


একথাটি বার বার শুনে শুনে মামাতো বোনটিকে নিয়ে আমি মাঝেমধ্যে স্বপ্নের জাল বুনতাম। সে সোনাঝরা দিনগুলো ছিল যথার্থই মধুময়। আজ অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি। আমার সে বোনটি আজ বিবাহিতা; অন্যের ঘর আলো করেছে সে। কিন্তু শৈশবের সে নানা রঙের দিনগুলোর স্মৃতি ভোলা তো সম্ভব নয় । 


এসব স্মৃতি আমার সম্পদ। কেননা কোনো বিজন মুহূর্তে সে স্মৃতিতে ডুব দিয়ে আমি আজো অশেষ তৃপ্তি পাই। 


উপসংহার

শৈশব স্মৃতি আমার কাছে এক অমূল্য সম্পদ। সে দিনগুলো যদি ফিরে পাওয়া যেত, তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু তা তো আর পাবার কোনো উপায় নেই। তাই, সে-সব স্মৃতি রোমন্থন করেই আমি আমার হারানো শৈশবকে ফিরে পেতে চাই। 



Next Post Previous Post