লেখক আরিফ আজাদের উমরাহ সফরের ডায়েরি !

মসজিদে নববীতে 'রিয়াজুল জান্নাহ' নামে একটা জায়গা আছে। নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর (এখন যেখানে উনার কবর আছে) থেকে শুরু করে উনার মিম্বারের মধ্যবর্তী অংশটাকেই বলা হয় রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান। এই অংশটাই মূলত নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ ছিলো।

রিয়াজুল জান্নাহ সবসময় খোলা থাকে না। নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্যই এটা খোলা হয়। ওই সময়টা রিয়াজুল জান্নাহতে দুই রাকা'আত সালাতের জন্য ঢুকতে গেলে রীতিমতো যুদ্ধ করা লাগে। গতকাল এমনই এক যুদ্ধ জয় করে আলহামদুলিল্লাহ তাহাজ্জুদ সালাত পড়ার জন্যে রিয়াজুল জান্নাহতে ঢুকবার সৌভাগ্য হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

রিয়াজুল জান্নাহ জায়গাটা খুবই ছোট। একসাথে অনেকগুলো মানুষ ধারণ করা যায় না। ফলে, একটা দল ভিতরে ঢুকলে অন্য দলকে বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। আগের দল সালাত আর জিয়ারত সমাপ্ত করে বের হলেই পরের দলকে ঢুকতে দেয়।

আমাদের আগের দল ভেতরে থাকায় আমরা বাব-ই জিবরাঈলের কাছে অপেক্ষা করছিলাম। বাব-ই জিবরাঈল সেই দরোজা যে দরোজা দিয়ে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যাতায়াত করতেন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে। সেখানে অপেক্ষা করতে গিয়ে পরিচয় হলো দুটো ভাইয়ের সাথে। তারা একজন অন্যজনের সাথে লোকাল আরবিতে কথা বলছিলো। কৌতূহলের বশে তাদের একজনকে বললাম, 'Are you from?'

সে আমার কথাটা বুঝতে পারলো না। অন্যজন যে ছিলো, তার বয়স চৌদ্দ কী পনেরো হবে। পড়ে দশম শ্রেণীতে। প্রথমজনের হয়ে সে বললো, 'He can't speak English'.

ছোট্ট ভাইটাকে আমি বললাম, 'Ok. You guys from?'

-'I'm from Palestine & He is from Indonesia'.

- 'O MaShaAllah! Palestine! A dream place to visit! I love Al Aqsa!'.

তার সাথে আমার আড্ডাটা জমে উঠলো বেশ। সে জানতে চাইলো আমি কোথায় থাকি। বললাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম প্রধান দেশ। সে আমাকে বললো, 'তুমি কি উমরাহ সেরে এখানে এসেছো নাকি মদিনা থেকে উমরাহতে যাবে?'

- 'আমি আগে মদিনাতেই এসেছি। এখান থেকে মক্কায় যাবো। তুমি?'

- 'আমরা উমরাহ সেরে এখানে এসেছি।'

- 'তোমরা বলতে? তুমি আর কে?'

- 'আমি, আমার বাবা, আমার মা এবং বোন'।

- 'ও মা শা আল্লাহ! কী সুন্দর পারিবারিক ভ্রমণ!'

- 'হ্যাঁ। আমার আব্বা গতকাল চলে গেছেন। আম্মা আর বোন মহিলাদের সেকশানে আছেন।'

বয়স খুব কম তার, কিন্তু এমনভাবে সে আমার সাথে কথা বলছে, এতো বেশি হৃদ্যতা নিয়ে যেন মনে হচ্ছিলো তার বয়স কম করে হলেও ত্রিশ। ম্যাচিউরিটি লেভেল খুব হাই! আড্ডার একপর্যায়ে তাকে বললাম, 'আহমাদ, খুব পারসোনাল একটা প্রশ্ন করি?'

- 'অবশ্যই। দ্বিধাহীনভাবে বলো'।

- 'মক্কা আর মদিনাতে সবচেয়ে বেশি কোন দুয়াটা আল্লাহর কাছে করেছো তুমি?'

সে একটু উদাসভাবে বললো, 'সবচেয়ে বেশি আমার বাবার জন্যে দুয়া করেছি। তিনি আজ ছয়মাস যাবত একটা রোগে ভুগছেন। এই রোগের জন্য তার চাকরিও চলে গেছে। এখন তিনি বেকার। আমাদের সময়গুলো এখন খুবই কষ্টে যাচ্ছে'।

- 'ইন্নালিল্লাহ! আহমাদ, আমার রব তোমার বাবাকে শেফা দিন। তোমাদের কষ্টের মুহূর্তগুলোকে তিনি সহজ করুন। ধৈর্য ধরার তাওফিক দিন'।

সে আমার দুয়াতে 'আ-মিন' বললো, এবং সাথে সাথেই বললো, 'আমি প্যালেস্টাইনের জন্যেও দুয়া করেছি অনেক। জানো তো, দখলদার ইসরা-ঈলিরা আবার আমাদের ওপর হামলা করেছে।'

- 'আমি জানি আহমাদ। দুঃখ পেয়ো না। একদিন আমাদের বিজয় হবে ইন শা আল্লাহ। উম্মাহ হিশেবে, একদিন আবার আমরা জেগে উঠবো'।

আমার এই কথা শুনে সে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো। আমার চোখে চোখ রেখে কী দারুন আর দীপ্ত গলায় সে বললো, 'ইন শা আল্লাহ'।

আহমাদ আমাকে দুটো জিনিস উপলব্ধি করিয়ে গেলো। তার বাবার চাকরি চলে গেছে। তাদের সময়গুলোও কাটছে খুব কষ্টে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক কষ্টের মাঝেও তার পুরো পরিবার সেই প্যালেস্টাইন থেকে চলে এসেছে উমরাহ করতে। একজন বা দুইজন নয়, চার চারটে মানুষ! আহমাদের বাবার জায়গায় যদি আমি থাকতাম, এতোগুলো টাকা খরচা করে আমি কি পারতাম আল্লাহর ঘর জিয়ারতে আসতে? আমি ভাবতাম- 'চাকরি-বাকরি নেই, জমানো টাকা থেকে যদি এভাবে এখনই খরচ করে ফেলি, সামনের দিনে তো কষ্ট আরো বাড়বে। বরং এখন টাকাগুলো থাকুক। চাকরির আরেকটা ব্যবস্থা হলে নাহয় যাওয়া যাবে'।

কিন্তু আহমাদের বাবা এমন অর্থনৈতিক সংকটেও এমন খরচার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেনি। কারণ, রিযিকের ধারণাটা এই লোকগুলো এতো ভালোভাবে বুঝে যা চিন্তাও করা যায় না। পারবেই বা না কেনো? দশটা খেঁজুর আর কয়েক মশক পানি সাথে করে সুবিশাল মরুভূমি পাড়ি দেওয়া লোকেদের বংশধর না এরা!

দ্বিতীয়ত, উম্মাহ হিশেবে আমাদের বিজয়ের আশ্বাসবাণী শুনে আহমাদের চোখেমুখে যে বিপ্লব আর বিজয়ের দীপ্তি আমি দেখেছি, আমি বিশ্বাস করি এই দীপ্তির কাছে একদিন দুনিয়ার সকল দখলদার, সকল জালিম পরাজিত হবে। এই দীপ্তির নাম ঈমান! এই দীপ্তি রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো আহমাদদের একদিন জাগিয়ে তুলবেই, ইন শা আল্লাহ।

'আমার উমরাহ সফরের ডায়েরি'।
১৮ ই রামাদান, ২০২২।


Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi

Next Post Previous Post