মানুষের জীবন অতিক্ষুদ্র। কিন্তু এর আবেদন ও অবদানের সম্ভাবনা বিশাল। জীবন সীমাবদ্ধ। কিন্তু একটি জীবনের স্বপ্ন ও প্রভাব অসীম হতে পারে। এর জন্য চাই জীবন গড়ার প্রেরণা। এগিয়ে চলার পাথেয়। স্বপ্ন বোনার ক্ষমতা। বাস্তবায়নের ইচ্ছা। এসব ক্ষেত্রে নিজের এবং অন্যের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা বাতিঘরের ভূমিকা পালন করে। একজন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমান আয়নার মতো কাজ করে। কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের জীবন থেকে তুলে আনা মুক্তোমালা মশালের মতো কাজ করে।
এক মলাটে যদি দীনদার, দীনে ফেরা মুমিন ভাই-বোনদের নানা ঘটনার পাশাপাশি জীবন চলার পাথেয় হিসেবে কুরআন, সুন্নাহ ও সিয়ার হতে উপযুক্ত খোরাক পাওয়া যায়, তবে এককথায় একে ‘সোনায় সোহাগা’ না বলে উপায় নেই। গল্প কল্প চিন্তা বইটি এমনই এক রত্ন। বইটির প্রতিটি গল্পেই রয়েছে জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষা। দীনি আলোচনাসমূহে রয়েছে ব্যক্তিগত চরিত্র গঠন, দাম্পত্য-সম্পর্ক, সংসার গড়ে তোলার এবং নিজেকে পরিণত মুমিন হিসেবে গড়ে তোলার পাথেয়। সবমিলিয়ে বইটি হতে পারে আপনার সেরা বন্ধুদের একজন।
بسم الله الرحمن الرحيم
إن الحمد لله، نحمده ونستعينه ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله
হামদ, ছানা, দরুদ আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের কালাম পাঠের পর,
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ومن أحسن قولا ممن دعا إلى الله وعمل صالحا وقال إنّني من
المسلمين = ولا تستوى الحسنة ولا السيئة إدفع بالتي هي أحسن فإذا الذي بينك وبينه عداوة كأنه ولي حميم = وما
يلقبها إلا الذين صبروا وما يتقنها إلا ذو حظ عظيم 25
‘আর তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, (নিজে) সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি গল্প কল্প চিন্তা
একজন মুসলমান? ভালো ও মন্দ সমান নয়। আপনি (বিরোধীদের) জবাবে তা-ই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন, আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। আর এমন চরিত্র তারাই লাভ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে, এবং এমন চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান।
তিনি আরও বলেন,
أدع إلى سبيل ربك بالحكمة والموعظة الحسنة وجادلهم بالتي هي أحسن إن ربك هو أعلم بمن ضل عن سبيله وهو أعلم بالمهتدين
‘আপনি আপন পালনকর্তার পথের প্রতি জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে (হিকমাত) ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে দাওয়াত দিন এবং উত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করুন। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে, এবং তিনিই ভালো জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।
অন্যত্র তিনি বলেন,
فسيحوا في الأرض أربعة أشهر واعلموا أنكم غير معجزى الله
وان الله مغزى الكفرين
‘অতঃপর তোমরা (চুক্তির সময়ে) জমিনের বুকে চার মাস পরিভ্রমণ করো। আর জেনে রেখো, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না; আর নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদিগকে লাঞ্ছিত করে থাকেন।
সূরা ফুসসিলাত / হা-মীম সিজদা, ৪১ ৩৩-৩৫
সূরা সূরা নাহল, ১৬ : 125
1.) সূরা আহযাব, ৩৩ : ৭০, ৭১
তামীম দারী রা. বলেন,
أنّ النّبي صلى الله عليه وسلم، قال: الدين النصيحة. قلنا: لمن؟ قال: لله ولكتابه ولرسوله ولأئمة المسلمين وعامتهم
*(সদুপদেশের মাধ্যমে) কল্যাণ কামনাই দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, 'আল্লাহ, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। তা
উপরি-উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন, 'এই হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্একদল আলিমের মতে, এই হাদীসের বাণীটি ইসলামের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ যে চার হাদীসের ওপর দ্বীনের সমস্ত বিষয় নির্ভর করে, তন্মধ্যে এই হাদীসটিও একটি হাদীস।
একই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু দাকীকীল ঈদ রহ. বলেন, ‘নসীহাত তথা সদুপদেশ প্রদান করা ‘ফারফুল কিফায়া' পর্যায়ের দায়িত্বপূর্ণ ইবাদাত। উপযুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তা আদায় করা গেলে অন্যরা এ থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবেন। এবং প্রয়োজন অনুসারে উপদেশ প্রদান করা উম্মাহর দায়িত্বও বটে।।
প্রিয় পাঠক, দ্বীনি ও দুনিয়াবী বিষয়ে উপদেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। আর সেই উপদেশ যদি উপমা-উদাহরণের মাধ্যমে হয়; কুরআন, হাদীস ও আছারের মাধ্যমে হয়—তবে তো সোনায় সোহাগা।
অধম গুনাহগার নিজেই উপদেশের মুখাপেক্ষী, সেখানে অন্যকে উপদেশ দেয়া আমার জন্য বেশ বাড়াবাড়িই বটে। তবে এ ক্ষেত্রে সাহাবী আনাস ইবনু মালিক রা.-এর একটি বর্ণনা আমাকে আশা জুগিয়েছে। তিনি বলেন,
قلنا : يا رسول الله! لا تأمر بالمعروف حتى تعمل به گله، ولا تنهى عن المنكر حتى تجتنبه كله؟ فقال ﷺ : بل مروا
[ সহীহ মুসলিম : ৫৫।
[e] শরহুন নববী আলা মুসলিম : ২/৩৭।
শরহুল আরবাঈন ৫২।
بالمعروف وإن لم تفعلوا به كله، وانهوا عن المنكر وإن لم
تجتنبوه گله
“আমরা আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, যাবতীয় বিধিবিধানের ওপর আমল করার আগ পর্যন্ত আমরা অপরকে সৎকাজের আদেশ করব না এবং সমস্ত গুনাহ পরিত্যাগ করার আগে আমরা অপরকে অসৎকাজের নিষেধ করব না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'যদি সব বিধান পালন করতে নাও পারো, তারপরও তোমরা সৎকাজের আদেশ করো। সব গুনাহ পরিত্যাগ না করতে পারলেও তোমরা অসৎকাজের নিষেধ করো।”
বক্ষ্যমাণ বইটি মূলত তিন ধরনের আলোচনায় সাজানো। (১) দাওয়াত ও তাবলীগসহ বিভিন্ন দাওয়াতী সফর ও দ্বীনি কারগুজারি। (২) আমাদের শিক্ষাজীবনে কাছ থেকে দেখা কিছু মজার ঘটনা। এবং (৩) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে লেখা আমার কিছু প্রবন্ধ। এসব লেখার মধ্যে বিয়ে, দাম্পত্য, সংসার, চরিত্র গঠন ও আকিদা, বিশ্বাস ও আমল বিষয়ে অধমের কিছু কথাবার্তা তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্য এসব আলোচনার ক্ষেত্রে আমি সাধ্যানুযায়ী কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফের মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
সাথে অবশ্য আমার করা কিছু কাব্যানুবাদও এতে যোগ করা হয়েছে।
এসব ঘটনা ও আলোচনার মাধ্যমে আমাদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, করণীয় বর্জনীয় ও যাপিত জীবনের রসবোধ ইত্যাদি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ঘটনা ও আলোচনায় আমাদের জন্য শেখার এবং নেয়ার মতো কিছু আছে বলে আমার সুধারণা।
সঞ্চালন প্রকাশনীর প্রতি আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তারা আমার মতো দুর্বল কলমের ব্যক্তির লেখনীকে ছাপার অক্ষরে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের পথচলাকে সব সময় সহজ রাখুন। সীরাতুল মুসতাকীমের ওপর রাখুন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ব্যক্তি হিসেবে আমার আমলে যেমন ভুলত্রুটি
11 তাবরানী, মু'জামুল আওসাত : ৬/৩৬৫ [6628]। সনদ দুর্বল। রয়েছে, তেমনিভাবে চিন্তাভাবনা ও উপস্থাপনেও ভুল থাকা খুবই স্বাভাবিক। কোনো প্রাজ্ঞ পাঠকের বিজ্ঞ দৃষ্টিতে অধমের কোনো ভুলত্রুটি ধরা পড়লে জানানোর বিনীত অনুরোধ। জাযাকুমুল্লাহু ফিদ দারাইন।
আহমাদ ইউসুফ শরীফ
উত্তরখান, ঢাকা-১২৩০ ১০-০৪-১৪২১ বঙ্গাব্দ মোতাবেক
২৫-১২-১৪৪৩ হি. মোতাবেক
২৫-০৭-২২ ইং