হিজরী ৮ম শতাব্দীর অবিস্মরণীয় মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ্ আল হার্রানী (রহিমাহুল্লাহ্) [ মৃতঃ ৭২৮ হিঃ ] --- ইয়াযিদ ইবন মু‘আবিয়্যাহ সম্পর্কে বলেন ---
ﺍﻓﺘﺮﻕ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ
ﺃﺑﻰ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺛﻼﺙ ﻓﺮﻕ ، ﻃﺮﻓﺎﻥ ﻭﻭﺳﻂ . ﻓﺄﺣﺪ ﺍﻟﻄﺮﻓﻴﻦ ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﺇﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻛﺎﻓﺮﺍً ﻣﻨﺎﻓﻘﺎً ، ﻭﺃﻧﻪ ﺳﻌﻰ
ﻓﻲ ﻗﺘﻞ ﺳﺒﻂ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺸﻔِّﻴﺎً ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻧﺘﻘﺎﻣﺎ ﻣﻨﻪ ، ﻭﺃﺧﺬﺍً ﺑﺜﺄﺭ ﺟﺪﻩ ﻋﺘﺒﺔ ﻭﺃﺧﻲ ﺟﺪﻩ ﺷﻴﺒﺔ
، ﻭﺧﺎﻟﻪ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ ﺑﻦ ﻋﺘﺒﺔ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻣﻤﻦ ﻗﺘﻠﻬﻢ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻴﺪ ﻋﻠﻰ ﺑﻦ ﺃﺑﻰ
ﻃﺎﻟﺐ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻳﻮﻡ ﺑﺪﺭ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ . ﻭﺃﺷﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻨﻤﻂ ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺳﻬﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺮﺍﻓﻀﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻜﻔﺮﻭﻥ
ﺃﺑﺎ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﻭﻋﺜﻤﺎﻥ ﻓﺘﻜﻔﻴﺮ ﻳﺰﻳﺪ ﺃﺳﻬﻞ ﺑﻜﺜﻴﺮ . ﻭﺍﻟﻄﺮﻑ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ : ﻳﻈﻨﻮﻥ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺭﺟﻠًﺎ ﺻﺎﻟﺤﺎً ﻭﺇﻣﺎﻡ
ﻋﺪﻝ ، ﻭﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻭﻟﺪﻭﺍ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻭﺣﻤﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻳﻪ ﻭﺑﺮَّﻙ ﻋﻠﻴﻪ . ﻭﺭﺑﻤﺎ ﻓﻀَّﻠﻪ
ﺑﻌﻀﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻰ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ، ﻭﺭﺑﻤﺎ ﺟﻌﻠﻪ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﻧﺒﻴَّﺎ ... ﻭﻛﻼ ﺍﻟﻘﻮﻟﻴﻦ ﻇﺎﻫﺮ ﺍﻟﺒﻄﻼﻥ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ ﻟﻪ
ﺃﺩﻧﻰ ﻋﻘﻞ ﻭﻋﻠﻢ ﺑﺎﻷﻣﻮﺭ ﻭﺳِﻴَﺮ ﺍﻟﻤﺘﻘﺪﻣﻴﻦ ، ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻻ ﻳﻨﺴﺐ ﺇﻟﻰ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻓﻴﻦ
ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ ﻭﻻ ﺇﻟﻰ ﺫﻱ ﻋﻘﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻘﻼﺀ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻟﻬﻢ ﺭﺃﻯ ﻭﺧﺒﺮﺓ ﻭﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ : ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻣﻠﻜﺎ ﻣﻦ ﻣﻠﻮﻙ
ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻟﻪ ﺣﺴﻨﺎﺕ ﻭﺳﻴﺌﺎﺕ ﻭﻟﻢ ﻳﻮﻟﺪ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺧﻼﻓﺔ ﻋﺜﻤﺎﻥ ، ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻛﺎﻓﺮﺍ ، ﻭﻟﻜﻦ ﺟﺮﻯ ﺑﺴﺒﺒﻪ ﻣﺎ
ﺟﺮﻯ ﻣﻦ ﻣﺼﺮﻉ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻭﻓﻌﻞ ﻣﺎ ﻓﻌﻞ ﺑﺄﻫﻞ ﺍﻟﺤﺮﺓ ، ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺻﺎﺣﺒﺎ ﻭﻻ ﻣﻦ ﺃﻭﻟﻴﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ ،
ﻭﻫﺬﺍ ﻗﻮﻝ ﻋﺎﻣﺔ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻘﻞ ﻭﺍﻟﻌﻠﻢ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ . ﺛﻢ ﺍﻓﺘﺮﻗﻮﺍ ﺛﻼﺙ ﻓﺮﻕ ﻓﺮﻗﺔ ﻟﻌﻨﺘﻪ ﻭﻓﺮﻗﺔ
ﺃﺣﺒﺘﻪ ﻭﻓﺮﻗﺔ ﻻ ﺗﺴﺒﻪ ﻭﻻ ﺗﺤﺒﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻟﻤﻨﺼﻮﺹ ﻋﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻤﻘﺘﺼﺪﻭﻥ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ
ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﺻﺎﻟﺢ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﻗﻠﺖ ﻷﺑﻲ : ﺇﻥ ﻗﻮﻣﺎ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﺇﻧﻬﻢ ﻳﺤﺒﻮﻥ ﻳﺰﻳﺪ
ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺑﻨﻲ ﻭﻫﻞ ﻳﺤﺐ ﻳﺰﻳﺪ ﺃﺣﺪٌ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ !! ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎ ﺃﺑﺖ ﻓﻠﻤﺎﺫﺍ ﻻ ﺗﻠﻌﻨﻪ ؟ ﻓﻘﺎﻝ :
ﻳﺎ ﺑﻨﻲ ﻭﻣﺘﻰ ﺭﺃﻳﺖ ﺃﺑﺎﻙ ﻳﻠﻌﻦ ﺃﺣﺪﺍً . ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻤﻘﺪﺳﻲ ﻟﻤﺎ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻴﻤﺎ ﺑﻠﻐﻨﻲ ﻻ
ﻳُﺴَﺐ ﻭﻻ ﻳُﺤَﺐ ﻭﻗﺎﻝ : ﻭﺑﻠﻐﻨﻰ ﺃﻳﻀﺎ ﺃﻥ ﺟﺪﻧﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻘﺎﻝ : ﻻﻧﻨﻘﺺ ﻓﻴﻪ
ﻭﻻ ﻧﺰﻳﺪ ﻭﻫﺬﺍ ﺃﻋﺪﻝ ﺍﻷﻗﻮﺍﻝ ﻓﻴﻪ ﻭﻓﻲ ﺃﻣﺜﺎﻟﻪ ﻭﺃﺣﺴﻨﻬﺎ ... ﺃﻫـ ﻣﺠﻤﻮﻉ ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺝ /4
.
❛❛ইয়াযিদ সম্পর্কে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত! দু’দল অতি বাড়াবাড়ি করে এবং আরেকদল মধ্যপন্থী। সীমাহীন বাড়াবাড়ি-তে লিপ্ত একদল মনে করেন - তিনি কাফির ও মুনাফিক ছিলেন! তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) - থেকে প্রতিশোধ নিতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। তাঁর মধ্যে দাদা ‘উত্ববাহ , দাদার ভাই শাইবাহ , খালু ওয়ালিদ ইবন উত্ববাহ ও অন্যান্য যাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাহাবী আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) ও অন্যান্যরা বদরের যুদ্ধে হত্যা করেছিল সেই হত্যার প্রতিশোধ নিতে সর্বদা কাজ করত। উপরিউক্ত আক্বীদাহ শিয়া (রাফেদী) সম্প্রদায়ের লোকেরা পোষণ করে থাকে। এ শিয়ারা [ যারা বর্তমানে ইরান-ইরাকে ক্ষমতাশীল ] আবূ বকর, ‘উমার ও উসমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর মতো সাহাবীদেরকে কাফির বলে থাকেন। সুতরাং ইয়াযিদকে কাফির বলা তাদের জন্য অত্যাধিক সহজ।
.
দ্বিতীয় সীমালঙ্ঘনকারী দলটি মনে করেন - তিনি (ইয়াযিদ) একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ইমাম ছিলেন! তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে নিয়েছেন ও তাঁর জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। এমনকি তাদের কেউ কেউ তাকে আবূ বকর ও ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-র উপরে মর্যাদা দিয়ে থাকেন! আবার কেউ কেউ তাকে নবী পর্যন্ত বলে থাকেন - [ যার অনুসারীরা বর্তমানে ইয়াযিদিয়্যাহ ফির্কা নামে ইরাকে বিখ্যাত ]। যাদের সামান্য আক্বল, জ্ঞান ও পূর্বসূরীদের সম্পর্কে ধারণা আছে তাঁরা সবাই জানেন যে, এ দু’দলই গোমরাহ ও বাত্বিল আক্বীদাহ পোষণকারী। এ কারণেই যাদের সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান আছে - এমন জ্ঞানী গুণীগণ এ ধরণের মত পোষণ করেন না।
.
তৃতীয় দল: তারা মনে করেন যে, তিনি মুসলিম রাজা-বাদশাহদের একজন, তাঁর দোষ-গুণ দু’টোই ছিল। তিনি উসমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর) খিলাফতকালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাফির ছিলেন না। তবে তাঁর কারণেই হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) "শহীদ" হন এবং মাদীনার আহলে হাররার সাথে যা ঘটেছিল তার জন্য তিনিই দায়ী। তিনি সাহাবী বা আল্লাহর অলী ছিলেন না। এটা আক্বল, ইলম, সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞাত ও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত রায়।
.
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জাম'আত তাঁর ব্যাপারে আবার তিন দলে বিভক্ত। কেউ তাকে লা‘নত দিয়ে থাকে! আবার কেউ তাকে গালিও দেন না আবার ভালও বাসেন না। এটা ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)-র মত। এ রায়ের সাথে তার অনুসারী ও অন্যান্য অধিকাংশ মুসলমান একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-র ছেলে সালিহ একদা পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, কতিপয় লোক বলছে যে,তারা ইয়াযিদকে ভালবাসে! তখন তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে সে কি তাকে ভাল বাসতে পারে? তখন তিনি (ছেলে) বললেন, হে পিতা তাহলে আপনি কেন তাকে লা‘নত দেন না? তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি কি কখনও তোমার বাবাকে কাউকে লা‘নত দিতে দেখেছ? আবূ মুহাম্মদ মাকদিসী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ইয়াযিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,"আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তাকে গাল মন্দও করা যাবে না আবার ভালোও বাসা যাবে না। আমার কাছে আরো সংবাদ পৌঁছেছে যে, আমার পূর্বপুরুষ আবূ আব্দুল্লাহ ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ)-কে ইয়াযিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেন, আমরা তার সম্পর্কে বেশি বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি কোনোটাই করব না। এটাই ন্যায় সঙ্গত ও উত্তম কথা।❞
.
গৃহীত :
--- [ মাজমু’উ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ : ৪/৪৮১-৪৮৪ ]
.
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ইসলাম হাউজ. কম।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬