বোকাদের গল্প : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ) | Tales of Fools : Allama Ibn al-Zawzi (RA)

  • বই : বোকাদের গল্প
  • লেখক : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ)
  • প্রকাশনী : দারুল আরকাম
  • বিষয় : গল্প
  • পৃষ্ঠা : 168, কভার : হার্ড কভার

বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা যখন বোকা ও ভবঘুরেদের গল্প-কাহিনি শ্রবণ করবে, তখন তারা নিজেদের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত বিবেক-বুদ্ধি ও মেধার মূল্যায়ন করতে পারবে, যে বিবেক-বুদ্ধি থেকে নির্বোধদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ফলে আল্লাহপ্রদত্ত এ নেয়ামতের ওপর তারা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে উদ্বুদ্ধ হবে। অমনোযোগী ও বোকাদের আলোচনা একজন সচেতন মানুষকে অমনোযোগিতার উপকরণসমূহ থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সহায়তা করে, যখন এ অমনোযোগিতা দূর করা নিজের ইচ্ছা, শক্তি ও সাধ্যের ভেতরে হয়। সচেতন মানুষ যখন ত্রুটিপূর্ণ নির্বোধ ব্যক্তিরে প্রতি তাকাবে তখন তারা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহ আমাদের প্রতি অনেক বেশি অনুগ্রহ করেছেন এবং এতে তারা নিজেদের বুদ্ধি আছে বলে আত্মপ্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করবে। কেননা সাধারণ অবস্থায় মানবাত্মা দুঃখ-যাতনায় অস্থির হয়ে পড়ে, আবার উত্তম ও ভালো কিছুর অর্জনে প্রশান্তি ও আনন্দ বোধ করে।

ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি নেয়ামতের প্রাচুর্য দান করেছেন, স্বল্প কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকেও কবুল করে নিয়েছেন এবং স্বীয় সৃষ্টিজীবের মাঝে আমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। মহান আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি তার কোনো সমকক্ষ বা বিকল্প কাউকে সৃষ্টি করেননি এবং সকাল-সন্ধ্যা সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন তার পরিবার-পরিজন ও সাথি-সঙ্গীদের ওপর।

ইতিপূর্বে আমি ‘কিতাবুল আযকিয়া' নামক গ্রন্থে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের গল্প কাহিনি ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতিগুলো বর্ণনা করেছি, যেন তাদের মতো মেধাবী ও প্রতিভাবান ব্যক্তিরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা ও উপমা হতে পারেন। আর বীরত্বগাঁথা গল্প-কাহিনি তো বীরত্বেরই শিক্ষা প্রদান করে থাকে। এখন বোকা ও ভবঘুরেদের গল্প-কাহিনি নিয়ে কিছু লেখার প্রয়াস চালিয়েছি। আর এ ক্ষেত্রে আমার লক্ষ্য ছিল তিনটি :

এক. বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা যখন বোকা ও ভবঘুরেদের গল্প-কাহিনি শ্রবণ করবে তখন তারা নিজেদের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত বিবেক-বুদ্ধি ও মেধার মূল্যায়ন করতে পারবে, যে বিবেক-বুদ্ধি থেকে নির্বোধদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ফলে আল্লাহপ্রদত্ত এ নেয়ামতের ওপর তারা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে উদ্বুদ্ধ হবে।
হাকাম ইবনু সিনান হাওশাব রহ. হাসান সনদে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা যখন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন তখন তিনি জান্নাতবাসীকে তার ডান পার্শ্ব থেকে আর জাহান্নামবাসীকে তার বাম পার্শ্ব থেকে বের করেন। তারা জমিনে চলতে শুরু করে। তখন দেখা গেল কেউ অন্ধ, কেউ বোবা, আবার কেউ বিভিন্ন রকমের দুঃখ-দুর্দশায় লিপ্ত। এ অবস্থা দেখে আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহকে বললেন, হে আমার রব, আপনি কি আমার সন্তানদেরকে এক রকম করে সৃষ্টি করেননি? আল্লাহ তাআলা বললেন, হে আদম, আমি চাই আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করা হোক ।

মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু আব্বাস রাযি.-এর মজলিসে কথা বলল এবং কথার মাঝে অনেক ভুল করল। ইবনু আব্বাস রাযি. স্বীয় কৃতদাসের দিকে তাকালেন এবং তাকে স্বাধীন করে দিলেন। কৃতদাস তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনার এ কৃতজ্ঞতার কারণ কী? তিনি উত্তরে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে তোমার মতো বানাননি ।

দুই. দ্বিতীয় কারণ হলো, অমনোযোগী ও বোকাদের আলোচনা একজন সচেতন মানুষকে অমনোযোগিতার উপকরণসমূহ থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সহায়তা করে, যখন এ অমনোযোগিতা দূর করা নিজের ইচ্ছা, শক্তি ও সাধ্যের ভেতরে হয়। কিন্তু যখন অমনোযোগিতা ও নির্বুদ্ধিতা ব্যক্তির স্বভাবে পরিণত হয়ে যায় তখন তা দূর করা অসম্ভব হয়ে যায়।

তিন. তৃতীয় কারণ হলো, সচেতন মানুষ যখন ওই সকল ত্রুটিপূর্ণ নির্বোধ ব্যক্তিদের প্রতি তাকাবে তখন তারা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহ আমাদের প্রতি অনেক বেশি অনুগ্রহ করেছেন এবং এতে তারা নিজেদের বুদ্ধি আছে বলে আত্মপ্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করবে। কেননা সাধারণ অবস্থায় মানবাত্মা দুঃখ-যাতনায় অস্থির হয়ে পড়ে, আবার উত্তম ও ভালো কিছুর অর্জনে প্রশান্তি ও আনন্দ বোধ করে। হানযালা আল-কাতিব রাযি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করলেন। আমরা যেন তা স্বচক্ষে দেখছিলাম। একদিন আমি আমার পরিবারের কাছে ছিলাম। কোনো বিষয় নিয়ে তাদের সাথে হাসিঠাট্টা করলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনে একটি বিষয়ের উদ্রেক হলো। 

এরপর আবু বকর রাযি.-এর সাথে পথে দেখা হলো। আমি তাকে বললাম, হানযালা তো মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তা কীভাবে? আমি বললাম, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম। তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন তা চোখের সামনে। কিন্তু যখন আমার পরিবারের নিকট এলাম তখন হাসি-তামাশায় লিপ্ত হয়ে গেলাম। আবু বকর রাযি. বললেন, আমার অবস্থাও তো এমনই হয়। 

অতঃপর আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে অবস্থার বর্ণনা দিলাম। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, يا حنظلة لو كنتم عند أهليكم كما تكونون عندي لصافحتكم الملائة
على فرشكم وفي الطريق يا حنظلة ساعة وساعة.
হে হানযালা, আমার কাছে থাকলে তোমাদের যে অবস্থা হয়, তোমাদের পরিবারের কাছে গিয়েও যদি তেমনই অবস্থা হতো, তাহলে ফেরেশতাগণ তোমাদের সাথে বিছানায়, পথে-ঘাটে মুসাফাহা করত। হে হানযালা, এক মুহূর্ত অপর মুহূর্ত থেকে ভিন্ন হয় ।

আলি রাযি. বলেন, নিজেদের অন্তরকে প্রশান্তি দাও এবং তার প্রশান্তির জন্য হেকমত তথা প্রজ্ঞা অনুসন্ধান করো। কেননা অন্তরও দেহের মতোই বিরক্তি অনুভব করে ।
তিনি এভাবেও বলেন, নিশ্চয়ই এ সকল অন্তর বিরক্তিবোধ করে, যেমনইভাবে দেহসমূহ বিরক্তিবোধ করে। সুতরাং তার প্রশান্তির জন্য হেকমত অন্বেষণ করো।

উসামা ইবনু যাইদ রাযি. বলেন, উত্তম আলোচনা দ্বারা অন্তরসমূহকে প্রশান্তি
দাও ।
হাসান বসরি রহ. বলেন, অন্তরসমূহ উজ্জীবিত হয় আবার মৃত্যুবরণ করে। যখন এগুলো উজ্জীবিত থাকে তখন নফল ইবাদতের মাঝে নিয়োজিত রাখো, আর যখন মৃতপ্রায় হয়ে যায় তখন ফরজ ইবাদতে লিপ্ত রাখো।

ইমাম ইবনু শিহাব যুহরি রহ. বলেন, জনৈক ব্যক্তি সাহাবিদের সাথে বসে আলোচনা করতেন। যখন আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যেত এবং তার জন্য কথা বলা কঠিন হয়ে যেত তখন তিনি বলতেন, কান ঢিলে হয়ে গেছে এবং অন্তর বিষাদগ্রস্ত, এখন আর কিছু শুনতে আগ্রহী নই। সুতরাং আপনারা এখন নিজেদের কাব্য-কাহিনি নিয়ে কথা বলুন, গল্প শোনান এবং কবিতা আবৃত্তি করুন।

আবু দারদা রাযি. বলেন, কখনো কখনো আমি আমার অন্তরকে কিছু অনর্থক বিনোদনের মাধ্যমে প্রশান্ত করি এ আশঙ্কায় যে, আমি যদি সব সময় গুরুভার বিষয় মনের ওপর বহন করি তাহলে সে বিরক্ত হয়ে পড়বে।

মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক বলেন, ইবনু আব্বাস রাযি. তার সাথি-সঙ্গীদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর বলতেন, আমাদের একঘেয়েমি চলে এসেছে। অতঃপর তিনি আরব্য গল্প-কাহিনি জুড়ে দিতেন। তারপর আবার একঘেয়েমি চলে এলে এমনটি করতেন।

ইমাম ইবনু শিহাব যুহরি সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি তার সঙ্গীদের বলতেন, তোমরা নিজেদের কবিতা শোনাও এবং নিজেদের গল্প শোনাও। কেননা কান ক্লান্ত হয়ে গেছে এবং অন্তর বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেছে।
ইমাম ইবনু ইসহাক ইমাম ইবনু শিহাব যুহরি রহ. সম্পর্কে বলেন, ইবনু শিহাব যুহরি হাদিস বর্ণনা করতেন, অতঃপর বলতেন, তোমাদের কথার ভান্ডার খুলে দাও, কবিতা শোনাও, এমন কিছু শোনাও যা দ্বারা তোমাদের একঘেয়েমি কেটে যাবে এবং প্রাণবন্ততা ও সজীবতা চলে আসবে। কেননা কান ক্লান্ত হয়ে যায় এবং অন্তর অস্থির হয়ে যায়।

মালিক ইবনু দিনার রহ. বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তির অভ্যাস ছিল, হাদিস শুনতে শুনতে যখন একঘেয়েমি চলে আসত তখন তিনি বলতেন, কান ঢিলে হয়ে গেছে এবং অন্তর বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেছে, এখন আর কিছু শুনতে আগ্রহ নেই। সুতরাং তোমরা এখন নিজেদের কাহিনি কবিতাগুচ্ছ নিয়ে কথা বলো।

ইবনু যাইদ বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেন, আতা ইবনু ইয়াসার আমাদেরকে এমন এমন কথা শোনাতেন যা আমাকে এবং আবু হাযিমকে কাঁদিয়ে দিত। অতঃপর তিনি এমন এমন কথা বলতে শুরু করতেন, যা আমাদেকে হাসিয়ে দিত। এরপর একবার এ কথা আরেকবার ও কথা বলতেন।
আমার (ইবনুল জাওযি) মতে, আলিমগণ এবং বিশিষ্ট মনীষীগণের কৌতুক রসিকতা ভালো লাগে। আর তারা রসিকতা করেন এ জন্য যে, তা অন্তরে প্রশান্তি ও প্রাণবন্ততা সৃষ্টি করে এবং চিন্তার ক্লান্তি থেকে অন্তরকে মুক্তি প্রদান করে।

একদিন শুবা হাদিস বর্ণনা করছিলেন এমন সময় মুরিদ নাহবিকে দেখে বলেন, এ তো আবু যাইদ (তারপর তিনি জাহিলি যুগের কবি নাবিগাতু যিবইয়ানির নিম্নোক্ত পক্তি আবৃত্তি করেন)।
فاستعجمت دار نعم ما تكلمنا...والدار لو كلمتنا ذات أخبار নুয়ামের ঘর বধির হয়ে গেছে, সে আমাদের সাথে কথা বলে না, আর যদি ঘর আমাদের সাথে কথা বলত তবে সে অনেক সংবাদ প্রদান করত।

ইবনু আয়েশার রসিকতাপূর্ণ কিছু বর্ণনা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। তাতে উলটা-সিধা কথাবার্তাও বিদ্যমান। এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনার মতো ব্যক্তিও কি এ ধরনের কথাবার্তা বলে? তিনি বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক । তুমি কি এ বিষয়ের সমর্থিত সূত্রগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করো না? যার সূত্রে এ সকল বর্ণনা এসেছে, সে ব্যক্তি অবশ্যই আমাদের এ যুগের মানুষ থেকে উত্তম। কিন্তু যে ব্যক্তির অন্তর নষ্ট হয়ে গেছে, সে এ সকল রসিকতার বাহ্যিক দিকটা দেখে। নিশ্চয়ই জাতির অভ্যন্তরীণ অবস্থা বাহ্যিক অবস্থার ওপর প্রতিফলন ঘটে।

উবাইদুল্লাহ ইবনু আয়েশার নিকট একজন দরবেশ ব্যক্তির গুণাবলি বর্ণনা করা হলো। লোকেরা বলল, তার গুণাবলি ও পরিচিতি সবকিছুর বর্ণনা এমন... এমন। তিনি বললেন, সে তার নিয়ন্ত্রিত আত্মাকে কোণঠাসা করে রেখেছে, সংকীর্ণ করে রেখেছে এবং নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘ হওয়ার বিষয়টি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। তোমরা যদি তাকে পৃথক করে দাও এবং এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় স্থানান্তরিত করো, তাহলে সে একঘেয়েমির সংকীর্ণতার কারণে দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস গ্রহণ করবে। আর সমস্ত অস্থিরতা একটি মাত্র আনন্দের মাধ্যমে দূরীভূত হয়ে যাবে।

খলিফা হারুনুর রশিদ বলেন, মজার মজার গল্প মেধার প্রখরতা বৃদ্ধি করে, মেধাকে শানিত করে এবং শ্রবণশক্তি উন্মোচিত করে।
হাম্মাদ ইবনু সালামা” বলতেন, পুরুষদের মাঝে প্রকৃত পুরুষরাই রসিকতা পছন্দ করে, আর তাদের মাঝে যারা নারী স্বভাবের পুরুষ, তারাই কেবল তা অপছন্দ করে।

ইমাম আসমায়ি৺ রহ. বলেন, আমি মদিনার বিচারপতি মুহাম্মদ ইবনু ইমরান আত-তাইমিকে কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছি। আমি বিচারপতিদের মধ্যে তার থেকে বুদ্ধিমান অন্য কাউকে পাইনি। (আমি তাকে আবু বকর ইবনু মুগাভির নিম্নোক্ত কবিতা শোনালাম),
يا أيها السائل عن منزلي...نزلت في الخان على نفسي أغدو إلى الخبز من خابز...لا يقبل الرهن ولا ينسي آكل من كيسي ومن كسوتي...حتى لقد أوجعني ضرسي
আমার ঠিকানা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী হে ব্যক্তি, আমি আমার অন্তরের সরাইখানায় অবতরণ করেছি।
সকালে এমন রুটি প্রস্তুতকারীর নিকট থেকে আমার নিকট রুটি আসে, যে
জামানত গ্রহণ করে না এবং ভুলেও যায় না । আমি আমার জামা এবং পকেট থেকে খাবার গ্রহণ করি, এমনকি যদিও আমার দাঁত ধরে যায়।

এ কবিতা শুনে বিচারপতি বললেন, এটা আমাকে লিখে দাও। আমি বললাম, আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করে দিন। এ কথাগুলো কি লিখে
১. তিনি প্রসিদ্ধ বাদশাহ হারুনুর রশিদ। ১৯৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। -আল-আ'লাম : ৮/৬২ ২. হাম্মাদ ইবনু সালামা, বসরা নগরীর মুফতি ও হাদিস শাস্ত্রের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। ১৬৭ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। ইমাম যাহাবি রহ. তার ব্যাপারে বলেন, হাম্মাদ আরাবিয়্যার ইমাম, বিশুদ্ধভাষী এবং বিদআতিদের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ ছিলেন। 

তার অনেক রচনা রয়েছে। -আল-আলাম : ২/৭২ ৩. আসমায়ি, তিনি আবদুল মালিক ইবনু কারিব ইবনু আসমা আল-বাহিলি আবু সাইদ আল আসমায়ি। আরব্য উপাখ্যান, ভাষা কবিতা এবং ভূগোল শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন। তার অনেক রচনাবলি রয়েছে, তার মধ্য আল-খাইলুল আযদাদ উল্লেখযোগ্য। তিনি ১২১ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন ।

দেওয়ার মতো? তিনি বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক, লিখে দাও। কেননা মহান ব্যক্তিদের রসিকতা ভালো লাগে।

বৈধ বিনোদন
উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, এ উম্মতের আলিমগণ এমন বৈধ আনন্দ-বিনোদন করতেন, যা দ্বারা প্রাণবন্ততা সৃষ্টি হয়। কেমন যেন তা একটি স্বভাবসুলভ ব্যাপার। বিখ্যাত কবি আবু ফিরাস বলেন,
أروح القلب ببعض الهزل...تجاهلاً مني بغير جهل
فيه مزح أهل الفضل...والمزح أحياناً جلاء العقل
أمزح
কিছু রসিকতার মাধ্যমে আমি আমার অন্তরকে প্রশান্তি প্রদান করি অজ্ঞতার ভান ধরে, স্বভাবসুলভ অজ্ঞতার কারণে নয় । আমি তাতে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের মতোই রসিকতা করি, আর রসিকতা কখনো কখনো বুদ্ধির প্রখরতা সৃষ্টি করে।

হাসি-তামাশার হুকুম
কেউ যদি বলে, অলস-অবোধ ও বোকাদের কাহিনি হাসি-তামাশার সৃষ্টি করে, অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إن الرجل ليتكلم بالكلمة يضحك بها جلساءه، يهوي بها أبعد من الثريا. যে ব্যক্তি তার সাথি-সঙ্গীদেরকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কোনো কথা বলে, নিঃসন্দেহে এ কথা তাকে সুরাইয়া তারকা থেকেও অধিক দূরে নিক্ষেপ করে।

তাহলে ওই ব্যক্তিকে প্রতিউত্তরে বলব, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কথা বলে হাসাতে নিষেধ করেছেন যে কথার মাঝে মিথ্যার সংমিশ্রণ থাকে। অর্থাৎ ওই সকল হাদিসে মিথ্যা কাহিনি বলে লোকদেরকে হাসাতে নিষেধ করেছেন, কেননা অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
ويل للذي يحدث الناس فيكذب ليضحك الناس.
সে ব্যক্তির সর্বনাশ হোক, যে মানুষের সাথে কথা বলে, অতঃপর মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে।

কখনো কখনো মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে রসাত্মক কথা বলার অবকাশ রয়েছে। মুসলিম শরিফে ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতাম। (একদিন) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, আমি যদি দেখি যায়েদের কন্যা ওমরের স্ত্রী আমার কাছে ভরণপোষণের আবেদন করে, তাহলে আমি তার ঘাড় মটকে দেব। এ কথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন ।

তবে সব সময় মানুষকে হাসানো ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত করা মাকরুহ। আর সামান্য হাসি-রসিকতা নিন্দনীয় নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসেছেন। কখনো কখনো হাসতে হাসতে তার মাড়ির দাঁত বের হয়ে যেত। তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে হাসা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন,
كثرة الضحك تميت القلب.
অধিক হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। কোনো কোনো সময় রসিকতার মাধ্যমে বিনোদন করা খাদ্যে লবণ ছিটানোর মতো মজাদার।

আবুল ফারাজ জামালুদ্দিন আবদুর রহমান ইবনু আবুল হাসান ইবনু আলি ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলি ইবনু উবাইদুল্লাহ ইবনু হুমাদা ইবনু আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাসিম ইবনু নযর ইবনু কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবু বকর সিদ্দিক আল-কুরাইশি আত-তামিমি আল-বাকরি আল-হাম্বলি আল-বাগদাদি। হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ, মুহাদ্দিস, ঐতিহাসিক, ধর্মপ্রচারক ও বহুগ্রন্থের প্রণেতা। তিনি ৫১০ হিজরিতে, মতান্তরে ৫০৮ থেকে ৫১৭ হিজরির মধ্যবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। বসরা নগরীর জাওযা মহল্লার দিকে সম্পর্কযুক্ত করে তাকে জাওযি বলা হয়। যখন তার বয়স মাত্র তিন বছর তখন তার পিতা ইন্তেকাল করেন। অতঃপর তার মা ও ফুফু তার শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং সমসাময়িক প্রসিদ্ধ আলিমগণের নিকট উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। তার উস্তাদগণের নামের তালিকায় প্রায় আটাত্তরজন বিশিষ্ট আলিমের নাম উল্লেখ করা হয়।

ইবনুল জাওযি প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। তার উস্তাদ ইবনুয্ যাগুনি ওয়াজ-নসিহত করতেন, তিনি একজন বক্তা ছিলেন। তৎকালীন সময়ে এটা একটি বিশেষ মর্যাদার বিষয় ছিল। উস্তাদের ইন্তেকালের পর তিনি তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, কিন্তু অল্প বয়স হওয়ার কারণে তখন তিনি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তার ওয়াজ শ্রবণ করার পর তাকে ‘জামিউল মানসুরে’ ওয়াজ করার অনুমতি প্রদান করা হয়। এরপর তার ইলমের প্রতি অনুরাগ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার দৃষ্টিতে জ্ঞানার্জন ছিল উত্তম নফল ইবাদত। যুহদ-কৃচ্ছ্রসাধনার প্রতি তার তেমন অনুরাগ ছিল না। তিনি পানাহার ও স্মরণশক্তিবর্ধক খাদ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতিও তিনি বিশেষ যত্নবান ছিলেন।

ইবনুল জাওযি স্বীয় যুগে ওয়াজ-নসিহতের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এ সকল উপদেশমালায় তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং অলংকারিক কাব্যবিন্যাস চারদিকে আলোড়ন সৃষ্টি করে। খলিফা আল-মুতাফিরের শাসনামলে ইবনুল জাওযি তার বিশেষ উজির ইবনু হুবাইরার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। 

ইবনুল জাওযি প্রতি শুক্রবার ইবনুল হুবাইরার বোকাদের গল্প: গৃহে ওয়াজ-মাহফিলের অনুষ্ঠান করতেন। খলিফা আল-মুসতানজিদের শাসনামলে ইবনুল জাওযি শাহি মসজিদে ওয়াজ করার অনুমতি লাভ করেন। খলিফা বাগদাদের অন্যান্য শাইখ ও আলিমগণের সঙ্গে তাকেও খেলাফত প্রদান করেন। খলিফা আল-মুসতাদিরের শাসনামলেও তিনি তার বিশেষ অনুগ্রহভাজন ছিলেন। তিনি খলিফার নামে 'আল-মিসবাহুল মুদি ফি দাওলাতিল মুসতাদি' নামক গ্রন্থ রচনা করেন। 

অতঃপর ৫৬৮ হিজরিতে ‘মিসরে ফাতিমিদের পতন ও আব্বাসি' নামক আরেকটি গ্রন্থ রচনা করে তা খলিফার দরবারে পাঠিয়ে দেন। এতে খুশি হয়ে খলিফা তাকে অনেক পুরস্কার প্রদান করেন। খলিফা ও উজির-ওমরাদের সাথে তার এমন সম্পর্ক কোনো সম্পদ লাভ বা কোনো প্রকার জাগতিক স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে ছিল না। তিনি নিজেই বলেন, জীবিকা অর্জনের জন্য আমি কখনো কোনো আমিরকে তোষামোদ করিনি। ৫৭০ হিজরিতে তিনি বাগদাদ শহরে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে নিয়মিত পাঠদান শুরু করেন। মানুষের ওপর তার ওয়াজের এত প্রভাব ছিল যে, প্রায় লক্ষাধিক লোক তার হাতে তাওবা করার সুযোগ লাভ করে। তিনি নিজেই 'কিতাবুল কুসাস ওয়াল মুয়াককিরিন' গ্রন্থে এ কথা উল্লেখ করেছেন। 

প্রায় বিশ হাজার ইহুদি ও খ্রিষ্টান তার হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। শেষ বয়সে ইবনুল জাওযি মহাবিপদের সম্মুখিন হন। পাঁচ বছর কারারুদ্ধ থাকেন। অতঃপর খলিফার মায়ের সহায়তায় মুক্তি লাভ করেন। কারামুক্তির পর তিনি বাগদাদ শহরে ফিরে আসেন এবং ৫৯৭ হিজরির রমজান মাসে ইন্তেকাল করেন। ইবনুল জাওযি রহ. সর্বাবস্থায় হাম্বলি মাযহাবের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।

রচনা-সংকলনে ইবনুল জাওযি রহ.-এর অসাধারণ আগ্রহ ছিল। তিনি যে গতিতে ওয়াজ করতেন ঠিক সে গতিতেই রচনার কাজে নিমগ্ন থাকতেন। তিনি প্রায় তিনশ গ্রন্থ রচনা করেছেন। উলুমুল কুরআন বিষয়ে তিনি প্রায় ২৭টি কিতাব রচনা করেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, যাদুল মাসির ফি ইলমিত তাফসির, আসবাবুন নুযুল ও উয়ুনু উলুমিল কিরাআত। হাদিস, রিজাল ও উলুমুল হাদিস বিষয়ে প্রায় ৪২টি কিতাব রচনা করেন। ফিকাহ উসুলে ফিকাহ বিষয়ে প্রায় ৫৪টি কিতাব রচনা করেন। আদব ও উলুমুল আদব বিষয়ে প্রায় ২০টি কিতাব রচনা করেন। ইতিহাস, জীবনী প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় ৯২টি কিতাব রচনা করেন। 

উলুমুত তারবিয়া ওয়াল আখলাক ওয়াল মাওয়ায়েজ প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় ৪৩টি কিতাব রচনা করেন। উলুমুত তিব্বি ওয়াল হায়াত বিষয়ে প্রায় ১০টি কিতাব রচনা করেন। 

বোকাদের গল্প : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ) | Tales of Fools : Allama Ibn al-Zawzi (RA) - collect original book 



Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi

Next Post Previous Post