কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ-১১ - আরিফ আজাদ
এর একটা সম্ভাব্য উত্তর আমি পেয়েছিলাম নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে। তিনি বলেছিলেন, ‘কিয়ামতের প্রাক্কালে এমন হবে যে— মানুষ সকালবেলা মুমিন থাকলেও সন্ধ্যেবেলা কাফের হয়ে যাবে। সন্ধ্যেবেলা কাফের থাকলেও, সকাল হতে হতে মুমিন হয়ে যাবে। অর্থাৎ— সময়টা এতোটা অস্থির আর সঙ্কটাপন্ন থাকবে যে— কার ঈমান কখন আসছে আর কখন যাচ্ছে তা বুঝে উঠাই মুশকিল হয়ে যাবে।
এজন্যে প্রতি সালাতে, প্রতি ওয়াক্তে এবং প্রতি রাক’আতে আমাদেরকে ঈমানের পথে অটল-অবিচল থাকার প্রার্থনা করতে হয়। আসরের সালাত পড়ে বাসায় এসে মাগরিবের আগে যে ঈমানহারা হয়ে যাবে না— তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই আসরের সালাতে ‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম’ তথা ‘আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করুন’ এই আয়াত তিলাওয়াত করে আসার পর মাগরিবের সালাতে গিয়েও একই আয়াত আবার, বারবার আমাদের পড়তে হয়।
আসর থেকে মাগরিব— এই অল্প সময়ের মাঝেও যে আমরা সংশয়ে পড়ে যাবো না, আমাদের ঈমান হুমকির মুখে পড়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা আমরা কেউ দিতে পারি না। তাই আসরের সালাতে আল্লাহর কাছে হিদায়াত চেয়ে এসে মাগরিবের সালাতে গিয়ে আবার হিদায়াত চাইতে হয়। মাগরিবের সালাতে হিদায়াত চেয়ে এসে ইশা’তে গিয়ে আবার চাওয়া লাগে। এই হিদায়াত চাওয়াটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আমাদের জন্য দৈনিক রুটিন বানিয়ে দিয়েছেন।
মুসা আলাইহিস সালামের কওম বনি ইসরাঈলিদের একটা ঘটনা পড়ে আমার মনে হলো— এই যে প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আমরা বাধ্যতামূলকভাবে আল্লাহর কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করি, এটা অতি-অবশ্যই জরুরি ছিলো।
ফেরাউনের অত্যাচারের বর্ণনা কুরআন থেকে আমরা যথেষ্ট পাই। বনি-ইসরাঈলিদের জীবনকে ছারখার করে দিচ্ছিলো অত্যাচারী, জালিম ফেরাউন। হেন কোন অত্যাচার-নির্যাতন আর নিষ্পেষণ নেই যা ভোগ করতে হচ্ছিলো না বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায়কে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা নবি মুসা আলাইহিস সালামের মাধ্যমে এই জালিম শাসকের হাত থেকে বনি-ইসরাঈলিদের মুক্তি দিলেন। শুধু তা-ই নয়, বনি-ইসরাঈলিদের চোখের সামনে ফেরাউন এবং তার বাহিনীকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা ডুবিয়ে মারলেন লোহিত সাগরের অতল তলে।
বনি-ইসরাঈলিদের প্রতি এই অপার দয়া আর অনুগ্রহ এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালার এই শক্তির পরিচয় বনি-ইসরাঈলি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকটা লোক খুব কাছ থেকে, নিজের চোখে অবলোকন করেছে।
একবার দৃশ্যটা ভাবুন তো— আপনার চোখের সামনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আপনার জন্যে সমুদ্রের মাঝে পথ তৈরি করে দিলেন। সেই পথ ধরে হেঁটে আপনি পার হয়ে গেলেন সু-বিশাল সমুদ্র! আপনার চারপাশে থৈ থৈ করছে সমুদ্রের জল। কোন এক অদৃশ্য শক্তি-বলে জলের এই স্রোত যেন আটকে আছে। আছড়ে পড়লেই অতল তলে তলিয়ে যাবেন আপনি। কিন্তু না! আপনাকে পথ করে দিতে সমুদ্র যে পালন করছে এক মহান দায়িত্ব!
পেছনেই আপনার শত্রুবাহিনী যারা এতোদিন ধরে অতিষ্ঠ করে তুলেছে আপনার জীবন। হত্যা করেছে আপনার অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বন্ধু-পরিজন। আপনার জীবনকে ছারখার করে দিতে এমন কোন আয়োজন নেই যা তারা করেনি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন— সমুদ্রের বুকে তৈরি হওয়া যে পথ ধরে আপনি পার হয়ে এসেছেন, সেই একই পথ ধরেছে আপনার শত্রুবাহিনীও। ভীষণ দাপটের সাথে তারা ছুটে আসছে আপনাকে বন্দী করতে। একবার ধরতে পারলেই সবকিছু শেষ!
কিন্তু সবকিছু শেষ আপনার হয়নি, হয়েছে তাদের। সমুদ্রের যে জল দু’ভাগ হয়ে আপনার জন্য পথ তৈরি করেছিলো, সেই একই জল মাঝ দরিয়ায় আপনার শত্রুবাহিনীর ওপরে প্রবল শক্তিতে আছড়ে পড়লো।
এমন ঘটনা যদি আপনার জীবনে ঘটতো, কেমন হতো আপনার ঈমানের অবস্থা? চিন্তাও করা যায় না!
আল্লাহর এমন চাক্ষুষ সাহায্য, এমন অপার রহমত লাভ করতে পারলে যেখানে আমরা সারাটা জীবন সিজদায় লুটিয়ে পড়ে কাটিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি, সেখানে বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায় কী করেছে?
ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তিলাভের কিছুদিন পরে, আল্লাহর আদেশে মুসা আলাইহিস সালাম গেলেন তূর পাহাড়ে। তিনি সেখানে চল্লিশ দিন থাকবেন। বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায়ের কাছে রেখে গেলেন নিজের ভাই হারুন আলাইহিস সালামকে। মুসা আলাইহিস সালামের এই চল্লিশ দিনের অনুপস্থিতিতেই, বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায় একটা কৃত্রিম বাছুরের মূর্তিকে নিজেদের ‘ইলাহ’ মেনে নিয়ে উপাসনা শুরু করে দিয়েছে। ভাবা যায়?
এরা স্ব-চক্ষে মুসা আলাইহিস সালামের মুজিযাগুলো দেখেছে আগে। মুসা আলাইহিস সালামের হাতের লাঠি ছেড়ে দিলে যেটা বিশালকায় সাপ হয়ে যেতো— সেই ঘটনা এরা জানতো। বাক্সে ভরে কীভাবে মুসা আলাইহিস সালামকে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, কীভাবে ফেরাউন-পত্নীর মাধ্যমে মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের গৃহে আশ্রয় পান, কীভাবে শত্রুর ঘরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা মুসা আলাইহিস সালামকে বড় করে তুলেছেন— এর সবই এদের জানা।
তা তো বটেই! মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর লাঠি দিয়ে যখন সমুদ্রের পানিতে আঘাত করলো, সাথে সাথে সমুদ্র ফুঁড়ে যে রাস্তা তাদের জন্য তৈরি হয়েছে, সেটা কি তারা দেখেনি? তারা কি দেখেনি ফেরাউন তার বাহিনী সমেত কীভাবে ডুবে মরেছে সমুদ্রের অথৈ জলে? এসবকিছুই তারা দেখেছে।
এসবকিছু দেখার পরেও, কেবলমাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে তারা মুসা আলাইহিস সালামের রবকে ত্যাগ করে পূজো করা শুরু করে দিলো একটা কৃত্রিম বাছুরের প্রতিকৃতিকে! এই পদস্খলনকে আপনি কোন অভিধায় ভূষিত করবেন, বলুন?
এতো আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা নিজেদের চোখে দেখে, নিজেদের কানে শুনেও ঈমানহারা হতে তাদের সময় লেগেছে কয়েকটা দিন মাত্র! এতোকিছু এতো নিবিড়ভাবে দেখবার পরেও বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায়ের যদি এই অবস্থা হয়, সেখানে আমাদের অবস্থা তো আরো করুণ হওয়ার কথা।
তাই, বনি-ইসরাঈলি সম্প্রদায়ের মতো ঈমানহারা হয়ে চরম দূর্ভোগ আর দূর্দশায় যাতে আমাদের নিপতিত না হতে হয়, সেজন্যেই প্রতি ওয়াক্ত সালাতে, প্রতি রাক’আতে তিনি আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাক্বীম তথা ঈমানের পথে, তাঁর রাস্তায় থাকার ফরিয়াদ করতে শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা সূরা ফাতিহার মধ্যে প্রতিবার বলি—
‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম’।
'আর, আমাদেরকে দেখান সরল-সঠিক পথ’।
'কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ-১১'
Tags : bangla tutorial,bangla current affairs,rgj bangla,how to convert word to pdf bangla,pdf,word to pdf,bangla book pdf,hs bangla mcq pdf,hs bangla saq pdf,bangla word to pdf,ms word to pdf bangla,bangla question pdf,bangla pdf book download,quran shikkha bangla pdf,bangla movie,crate pdf file in bangla,bangla cartoon,how to make pdf file bangla,pdf convert bangla tutorial,bangla book pdf free download,bangla,bangla word file to pdf converter, bangla pdf book download,bangla book pdf free download,pdf,bangla book pdf,bangla,bangla tutorial,bangla current affairs,hs bengali question paper 2022 pdf download,class 11 bengali question 2022 pdf download,how to download bangla book pdf free,r s agarwal gs bangla pdf download exam guruji,r s agarwal general science bangla pdf download,how to convert word to pdf bangla,free download,how to download free pdf bangla and english book,download bangla board boi